সৃজনশীলেই হবে ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিকের পরীক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

সৃজনশীলেই হবে ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিকের পরীক্ষা

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

সৃজনশীল পদ্ধতিতেই নেয়া হবে ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এই পরীক্ষার আয়োজন হবে। পরীক্ষার সিলেবাস, প্রশ্ন কাঠামোসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল তা নিরসন হলো। এর আগে আগামী নভেম্বরে-ডিসেম্বরে স্কুলগুলোতে অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক পরীক্ষাগুলোও একই পদ্ধতিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য। 

 প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২’ এর সঙ্গে চলমান মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে শুরু থেকেই আলোচনা-সমালোচনা ছিল। এই শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন নিয়ে এসেছে একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত। এর ফলে পড়াশোনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্তের ফলে অভিভাবকরা মনে করছেন, অন্তত শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে ফিরবে। কারণ নতুন শিক্ষাক্রমে লিখিত পরীক্ষা না থাকায় পড়াশোনা অনেকটা লাটে উঠেছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে যারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে তারা এবার নবম শ্রেণিতে পড়ছেন। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে এই শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণিতে উঠবে। সদ্য স্থগিত হওয়া শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নবম শ্রেণিতে কোনো বিভাগ বিভাজন ছিল না। দশম শ্রেণিতে উঠার পর নতুন শিক্ষাক্রমে নতুন পাঠ্যবই পড়ে পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নের ঘোষণা দেয়। এর ফলে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইকে পরিমার্জন করে মূল্যায়ন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে। আগামী বছর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যে বিভাগে (বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য) পড়তে চায় সেই বিভাগে ভর্তি হয়ে পরিমার্জিত পাঠ্যবই পড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতিতেই ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে। তার আগে চলতি বছর থেকেই বার্ষিক পরীক্ষাও ওই পদ্ধতির আলোকে হবে। তিনি বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতিতে কীভাবে পরীক্ষা নেয়া হবে তা নিয়ে আগামী বছরের পাঠ্যবইগুলোতে পরিমার্জন আনা হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পরিমার্জনের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। এরপরই স্কুলসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা পাঠিয়ে দেয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে যে শিক্ষাক্রম অনুমোদন করা হয়েছিল তাতে হাতে-কলমে লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি ছিল না। এ কারণে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা সেই শিক্ষাক্রমের সমালোচনা করেছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই শিক্ষাক্রমে হাতে-কলমে লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। কিন্তু শিক্ষাক্রমে চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না। এজন্য নতুন শিক্ষাক্রমে কিছু পরিমার্জন করে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মূল্যায়ন পদ্ধতি ফিরিয়ে আনে। যাতে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া যায়। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে পাঠ্যবইগুলোতে বড় পরিবর্তন হবে এবং পরিবর্তিত বইগুলো ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার্থীদের হাতে যাবে। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা না থাকায় ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিক পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ বছর যারা নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে তারাই ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা না থাকায় প্রশ্ন ছিল, ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে? যদি পরীক্ষা না-ই থাকে তাহলে শিক্ষাবোর্ডগুলোর কী পরিণতি হবে? কারণ মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা নেয় শিক্ষাবোর্ডগুলো।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে। একইভাবে স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষাও হবে বলে আমরা জেনেছি। শিগগিরই পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নির্দেশিকা জারি করবে বলে জানা গেছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে সৃজনশীল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন ব্যবস্থা ছিল।

শিক্ষা নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা বলেছে, আগের শিক্ষাক্রমগুলোতে লিখিত পরীক্ষা থাকায় শিক্ষার্থীকে পুরো বইটি কয়েক দফা পড়তে হতো। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে আজ যে অংশটি পড়বে সেটি আগামীকাল আর পড়া লাগবে না। কারণ অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষায় লিখিত পরীক্ষা না থাকায় যে দিন যে অংশ পড়বে ওইদিনই তা উপস্থাপন করবে এবং এই উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে পড়া শেষ হয়ে যাবে। সঙ্গত কারণেই মূল্যায়নের কৌশল পরিবর্তন না করলে অর্থাৎ হাতে-কলমে লিখিত পরীক্ষা যুক্ত না করলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাদের মতে, নতুন শিক্ষাক্রমে যেভাবে পাঠ্যবই লেখা হয়েছে তাতে হাতে-কলমের পরীক্ষা (পেপার-পেন্সিল টেস্ট) অনায়াসে যুক্ত করা যাবে। কারণ, নতুন পাঠ্যবইয়ে প্রতিটি শিখন অভিজ্ঞতায় বিষয়বস্তু আছে। শিখন ফল আছে। পারদর্শিতার সূচকও আছে। এখন এসব বিষয়কে আমলে নিয়ে অনুশীলনী যুক্ত করে দিলেই হবে। সেই অনুশীলনী থেকে প্রশ্ন করা যেতে পারে।

নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিকে প্রথমবার বাংলা এবং ধর্মশিক্ষা বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে অন্য বিষয়গুলোও এই পদ্ধতির আওতায় আসে। মাধ্যমিকের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিকেও শুরু হয় সৃজনশীল। প্রশ্নে একটি উদ্দীপকের আলোকে জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক, প্রয়োগমূলক ও উচ্চতর দক্ষতামূলক- এই ৪ ধরনের উত্তর লিখতে হতো। অবশ্য পরে এই সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। এরপর প্রণীত হয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২; যা ২০২৩ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। কিন্তু এটি করতে গিয়ে ধরা পড়ে নানা অসঙ্গতি। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়েছে এর মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে। কখনো বলা হয়েছে লিখিত পরীক্ষা নয়, পুরোটা হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন। আবার কখনো ৬৫ শতাংশ লিখিত আর ৩৫ শতাংশ শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নের কথা বলা হয়। সবশেষ ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে দেখা গেছে, মোট পাঁচ ঘণ্টার পরীক্ষা হয়েছে। যেখানে দুই ঘণ্টা বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটিস আর তিন ঘণ্টা লিখিত পরীক্ষা। সারাদেশে একই প্রশ্নে মূল্যায়ন হয়, যা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে প্রণীত। তবে, মূল্যায়নের বিতর্কে আরো ঘি ঢালে আগের রাতের প্রশ্নফাঁস। সেই প্রশ্নের সমাধানও আবার ইউটিউবে মিলে যায়। তারপর মূল্যায়নের সময় আবার বই দেখে লেখার সুযোগ। সব মিলিয়ে শিক্ষায় ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকই হয়েছেন তিক্ত-বিরক্ত।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, এই মূল্যায়ন পদ্ধতি মোটেও আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর নয়। আমাদের মূল্যায়ন বা কারিকুলাম পদ্ধতি এমনভাবে তৈরি করা হোক যেটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কার্যকরী হবে, আর আমরা যেন দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারি। একজন অভিভাবক বলেন, আমার তো মনে হয় না যে, আমার বাচ্চা তেমন কিছু শিখেছে। যেভাবে পরীক্ষা হয়েছে সেটা আদৌ পরীক্ষা কিনা, তা নিয়ে আমার সন্দেহ হয়। আর এই মূল্যায়ন আসার পর আমার বাচ্চা তো পড়তেই বসত না। পড়তে বসতে বললেও পড়েনি।

দেশের পটপরিবর্তনের পর অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক ইতোমধ্যেই নতুন পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষায় ৩০ শতাংশ হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন আর ৭০ শতাংশ লিখিত পরীক্ষা। লিখিত ৭০ শতাংশের জন্য ১০০ নম্বরের প্রশ্নপত্রে তিন ঘণ্টায় পরীক্ষা দিতে হবে। যেখানে বহুমাত্রিক প্রশ্নের মধ্যে থাকবে বহু নির্বাচনী প্রশ্ন, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, প্রেক্ষাপটনির্ভর প্রশ্ন। বিষয় ও প্রশ্নের ধরন অনুযায়ী হবে নম্বর বণ্টন। এনসিটিবি বলছে, শিক্ষার্থীরা লব্ধ জ্ঞানের কতটুকু অর্জন করতে পারল তা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতেই নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই পরিপত্র জারি হবে।

এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043931007385254