অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মির চাকরি বিধি লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করেছেন তার মা নাসরিন জাহান।
তিনি বলেন, সে চাকরির বিধি লঙ্ঘন করছে।
এটা তার ঠিক হয়নি। এটা একটা বড় অপরাধ। সব জায়গাতেই চাকরি বিধি মানতে হবে। আমরা যুদ্ধ করি নাই, যুদ্ধ দেখি নাই, যে যুদ্ধ হয়েছে, সেটা ইতিহাস। ইতিহাসকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা আমাদের মা-বাবাকে অস্বীকার করতে পারবো কি? বলেও প্রশ্ন রাখেন নাসরিন জাহান।
আরো পড়ুন: আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর সেই ম্যাজিস্ট্রেটকে বরখাস্ত
সোমবার (৭ অক্টোবর) রাত পৌনে ১২টায় তাপসী তাবাসসুম উর্মির মা নাসরিন জাহান একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, উর্মি ছাত্রজীবনে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তবে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে কোটা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। তখন তার ৪০তম বিসিএস পরীক্ষা ছিল। সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছে। সেখান থেকে মার্স্টাস করেছে। আমার সন্তানদের কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। আমরা খুব সাধারণ জীবনযাপন করি।
আরো পড়ুন ; আবু সাঈদকে সন্ত্রাসী আখ্যা: এবার সেই ঊর্মির বিরুদ্ধে মামলা
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাপসী তাবাসসুম উর্মি ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। তার বাবা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। তবে বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন।
সেই সঙ্গে উর্মির মা নাসরিন জাহান বতর্মানে হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ মুক্তাগাছায় গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বতর্মানে তারা ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের পেছনে কাশর জেল রোড এলাকায় নিজ বাসায় বসবাস করেন।
পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের নসিবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, উর্মি ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে উর্মি সবার বড়। ছোট ভাই জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। এর বেশি তাদের সম্পর্কে আমার জানা নেই।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তাপসী তাবাসসুম উর্মি। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।
এরপর তার এই পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনায় মুখে পড়েন উর্মি। এ ঘটনায় গত রোববার উর্মিকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। এরপর সোমবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।