সরকারি প্রজ্ঞাপন অমান্য করে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে পরীক্ষা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে সোনারগাঁওয়ের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সোনারগাঁও পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা করে নিয়ে এ পরীক্ষা নিচ্ছেন। দুই শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পরীক্ষা না নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আর্থিকভাবে লাভবানের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানরা এ নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষা নিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে এ অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামাল হোসেনকে শোকজ নোটিশ দিয়েছেন সোনারগাঁও মাধ্যমিক অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম প্রধান।
এদিকে সরকারি প্রজ্ঞাপনে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম শিখন শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গত ১৩ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এতে কোন প্রকার লিখিত পরীক্ষা না নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
সম্প্রতি ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা না নিয়ে মূল্যায়নের জন্য প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নির্দেশ দেয়া হয়। সেই নির্দেশনার কোন প্রকার ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়ী থাকবেন বলে উল্লেখ করেন। তবে এ নির্দেশনা অমান্য করে সোনারগাঁওয়ের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আর্থিক লাভবানের জন্য পরীক্ষার ফি গ্রহণ করে পরীক্ষা নিয়েছেন। পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সরাসরি প্রমাণ পাওয়া গেছে উপজেলার বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সোনারগাঁও পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।
বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া সাতভাইয়া পাড়া গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. কাউসার মিয়া বলেন, পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৩০ টাকা করে পরীক্ষার ফি নিয়ে নিয়েছেন। সরকারিভাবে নিষেধ থাকলেও তিনি তা মানছেন না। প্রশাসনের বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে সাফ জানিয়েছেন।
সোনারগাঁও পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী বানীনাথপুর গ্রামের অজয় চন্দ্র সরকার বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাচ্চাদের কাছ থেকে পরীক্ষার নামে ফি নিয়েছেন। শুনেছি পরীক্ষা হবে না। স্কুল থেকে পরীক্ষার ফি ও বেতনের চাপ দেয়া হয়েছে। বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. ওমর ফারুক বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা জেনে প্রধান শিক্ষককে পরীক্ষা না নেয়ার জন্য বলেছিলাম। তিনি তা শুনেননি। টাকার প্রতি তার অন্য রকম একটা টান আছে। বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ে কোথাও তিনি নির্দেশনা পাননি। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি প্রজ্ঞাপন নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেছেন। সোনারগাঁও পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, পরীক্ষা নিয়েছি সত্য। সোনারগাঁওয়ের অনেক প্রতিষ্ঠান ফি নিয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন। আমারও নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের ৩ মাসের বেতন আদায়ের কৌশল হিসেবে এ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।
সোনারগাঁও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম প্রধান বলেন, কোনোভাবেই ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির পরীক্ষা নেয়া যাবে না। এই দুই শ্রেণিতে মূল্যায়নের জন্য প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়ী থাকবেন। ইতোমধ্যে বৈদ্যেরবাজার নেকবার আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পরীক্ষা নেয়ার প্রমাণ পেয়ে শোকজ দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো.শরীফুল ইসলাম বলেন, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে কোনভাবেই পরীক্ষা নেয়া যাবে না। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য পরীক্ষা নেয়া বিধিবহির্ভূত। পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি অবগত হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।