ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্কুলে যাওয়ার পথে নবম শ্রেণির ছাত্রী রাখিয়া সুলতানা রিয়াকে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি রিপন মিয়াকে (২৯) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার ঘোড়াই হাঁটুভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেফতার করে ভালুকা মডেল থানা পুলিশের একটি দল। এ বিষয়ে আজ শনিবার ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা পুলিশ সুপার মাসুম আহাম্মেদ ভূঁইয়া।
গ্রেফতার রিপন মিয়া টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মাওশা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে।
নিহত রাখিয়া সুলতানা রিয়া উপজেলার বাটাজোর বিএম উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল ও বাটাজোর গ্রামের আবদুর রশিদের মেয়ে।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মাওশা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে রিপন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় রাখিয়া সুলতানার রিয়ার। বিয়ের কিছুদিন পর রিপন সৌদি আরব চলে যান। স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর রাখিয়ার ওপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন বলে পরিবারের লোকজনের অভিযোগ।
নির্যাতন সইতে না পেরে ছয় মাস আগে বাবার বাড়ি ফিরে আসে রাখিয়া। এক বছর বিরতি দিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করে মেয়েটি। এর মধ্যে স্বামী সৌদি আরব থেকে ২ অক্টোবর ফিরে এলেও আর শ্বশুরবাড়িতে যায়নি রাখিয়া।
স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবার ও বিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সমাপনী প্রস্তুতি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় রাখিয়া। বাড়ি থেকে আনুমানিক ১০০ গজ দূরে রাস্তার পাশে কলাক্ষেতে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা কাপড় দিয়ে মুখ মোড়ানো ও মাথায় ক্যাপ পরা এক ব্যক্তি রাখিয়াকে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তখন সে মা বলে চিৎকার করে দৌড়াতে শুরু করে। হামলাকারী পেছন থেকে ঘাড়, পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মেয়েটিকে জখম করে। চিৎকার শুনে মা মাজেদা খাতুন দৌড়ে এসে পাশের ধানক্ষেতে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাখিয়াকে উদ্ধার করেন। পরে মাজেদা খাতুনের ডাকচিৎকারে অন্য ব্যক্তিরা ছুটে আসেন। কিন্তু হামলাকারীকে তারা ধরতে পারেননি।
পরে রাখিয়াকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতে রাখিয়ার বাবা আবদুর রশিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর আসামি গ্রেফতারে সখীপুর, গাজীপুরে ও নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালায় পুলিশ। সর্বশেষ শুক্রবার বিকেলে মির্জাপুরের ঘোড়াই হাঁটু ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে রিপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ভালুকা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল হোসেন বলেন, স্কুলছাত্রীর হত্যাকারী রিপন মিয়াকে মির্জাপুরের ঘোড়াই হাটু ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত ঘটনাস্থলের ধানক্ষেত থেকে আজ সকালে সেই দা উদ্ধার করা হয়েছে।
ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন জানান, আমরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।