দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : লন্ডনের অন্যতম সেরা একটি স্কুলে নামাজ পড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে দেয়া হাইকোর্টের রায়ে ব্রিটিশ শিক্ষাবিদদের একটি অংশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এই রায়ের কারণে আরও স্কুল সম্মিলিতভাবে নামাজ নিষিদ্ধের পথে হাঁটতে পারে।
সম্প্রতি দেশটির একটি আদালত উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের ব্রেন্টের মিকেলা কমিউনিটি স্কুলে নামাজ নিষিদ্ধের মতামত দেয়। ওই মতামতের বিরুদ্ধে একজন মুসলিম ছাত্রী হাইকোর্টে আপিল করেন। আরজিতে তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা বৈষম্যমূলক এবং তার ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু, কোর্ট তার আপিল খারিজ করে দেয়।
এরপর দেশটিতে মুসলমানদের সংগঠন মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেন প্রথমবারের মতো মিকেলা স্কুলকে এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। এমন নিষেধাজ্ঞা ব্রিটেনে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতে স্কুলগুলোতে সবার অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে বলে সতর্ক করেছে তারা।
বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদের সঙ্গে কথা বলে লন্ডনের খ্যাতনামা পত্রিকা দ্যা গার্ডিয়ান।
বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির শিক্ষাগত নেতৃত্বের অধ্যাপক কলিন ডায়মন্ড তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ইংল্যান্ড এখন একটি নীতিগত বিশৃংখলার মাঝে রয়েছে এবং এ নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনার অবকাশ আছে। তিনি শিক্ষা বিভাগে এমনটি আশা করেননি।
তিনি বলেন, এই রায় আমাদের বিস্মিত করেছে। কারণ ইংল্যান্ডে ধর্মনিরপেক্ষ স্কুল বলে কিছু নেই। সরকারি স্কুলগুলোতে এখনও আইনগতভাবে দৈনিক সামষ্টিক উপাসনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা মূলত খ্রিষ্টীয় উপাসনা।
লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি ও আইন বিভাগের রিডার প্রকাশ শাহ বলেন, আদালতের এই রায় অন্যান্য স্কুলকে অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা প্রবর্তন করতে উৎসাহিত করতে পারে।
তবে কনফেডারেশন অফ স্কুল ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী লিওরা ক্রডাস এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এই রায়টি কিছু সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে দেয়া যা স্কুলের বিদ্যমান নীতি, পরিবেশ ও কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই অন্যান্য স্কুলগুলোর পরিস্থিতির সঙ্গে এর তুলনা করা খুব কঠিন।
চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রধান শিক্ষা অফিসার নাইজেল জেন্ডারস বলেন, আমরা মনে করি না যে, এই রায় ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতার নীতি পরিপন্থি।
যদিও বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক রেজা গোলামি বলেন, নামাজে নিষেধাজ্ঞা শিক্ষা নীতিনির্ধারক ও নেতাদের রাজনৈতিক প্যাটার্নের অংশ, যা মুসলমান শিক্ষার্থীদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলে মনে করাতে সহায়ক হতে পারে। উদার গণতন্ত্রের মূল প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্কুলগুলোতে প্রতিনিধিত্বকারী সম্প্রদায়গুলোর সাথে আলোচনায় বসা উচিত।