দৈনিক শিক্ষাডটকম, নাটোর : নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে মেশিন দিয়ে চলছে পিচকার্পেটিংয়ে পাথর মিশ্রণের কাজ। পাশেই আগুন জ্বেলে গলানো হচ্ছে বিটুমিন। ফলে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের লেখাপড়া। বিদ্যালয়ের মাঠে রাখা নির্মাণ সামগ্রী চেষ্টা করেও সরাতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সড়ক নির্মাণ সামগ্রী বালু, পিচকার্পেটিংয়ের পাথরের স্তূপ করে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের লোকজন। বিদ্যালয় চলাকালে ওই মাঠে আগুন জ্বেলে গলানো হচ্ছে বিটুমিন। এতে কালো ধোঁয়া বিদ্যালয় ভবনের ক্লাসরুমে প্রবেশ করায় শ্বাসকষ্টসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের লেখাপড়া।
এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করলে শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে যান। সেখানে রাখা সড়ক নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন তারা। কিন্তু সেই নির্দেশ মানেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুন ফেরদৌস, চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আলামিন, বাঁধন, রিয়া খাতুন জানায়, বিটুমিন গলানোর গন্ধে ক্লাসে বসা যাচ্ছে না। কালো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তাদের। এমনকি মেশিনের শব্দে ক্লাসে স্যারদের কথা বোঝা যাচ্ছে না।
তারা বলে, আমরা মাঠে নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধুলা করতে পারছি না।
মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রৌকিয়া খাতুন বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর ঠিকাদারের লোকজন আমাদের অনুমতি না নিয়ে সড়কের নির্মাণ সামগ্রী রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। ঠিকাদারের লোকজনদের বারবার অনুরোধ করে নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নিতে বললেও তারা সরাচ্ছে না। গত ১ জানুয়ারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপেজলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্কুল পরিদর্শন করেছেন। অবিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না। এ কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের সাব ঠিকাদার ইমরান হোসেন বলেন, এলজিইডি বিভাগের কেশবপুর সড়কে কাজ করার জন্য মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণ সামগ্রী রেখে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত কাজ চলবে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় এ কাজ চলছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠে সড়ক নির্মাণের কোনো সামগ্রী রেখে কার্যক্রম করার কোনো বিধান নেই। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে জানানোর পর আমি ও ইউএনও স্যার পরিদর্শন করে বিদ্যালয়ের মাঠে চলা কার্যক্রম বন্ধ করে ঠিকাদারের লোকজনদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। পরে মাঠের ছবি তুলে জেলা প্রশাসক স্যারকে দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদাররা এসব কার্যক্রম চালানোর ফলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান আকরামুল হক বলেন, গত সোমবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ঠিকাদারদের নির্মাণ সামগ্রী দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তারপরও যদি না সরায় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।