স্ত্রীর মামলায় সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান কারাগারে - দৈনিকশিক্ষা

স্ত্রীর মামলায় সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান কারাগারে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

স্ত্রীর মামলায় জামিন চাইতে গিয়ে কারাগারে গেলেন দ্য সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার টিটু। জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে গতকাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে সন্ধ্যায় পারটেক্স স্টার গ্রুপের এ ভাইস চেয়ারম্যানকে কারাগারে পাঠানো হয়।

দ্য সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার টিটু । ছবি : সংগৃহীত

প্রতারণা, স্বাক্ষর জালিয়াতি ও ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে আজিজ আল কায়সারের বিরুদ্ধে স্ত্রী তাবাসসুম কায়সার মোট চারটি মামলা করেন। এর মধ্যে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় তিনটি মামলা হয় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর। সবক’টিতেই আদালত থেকে জামিনে ছিলেন সিটি ব্যাংক চেয়ারম্যান। নতুন করে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর শুনানি ছিল গতকাল।

আজিজ আল কায়সার পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত এমএ হাসেমের জ্যেষ্ঠ সন্তান। তার ছোট ভাই ও পারটেক্স স্টার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজ আল মাহমুদ মিঠু বলেন, ‘আজিজ আল কায়সারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সবক’টি মামলাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক। এসব মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনটি মামলার হাজিরা ছিল। তার পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিলেন। বাদীপক্ষ থেকে জামিন বাতিলের কোনো আবেদনও ছিল না। হঠাৎ করেই আজিজ আল কায়সারকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। এর মধ্যে বাদীপক্ষের আইনজীবীকে জামিন বাতিলের আবেদন করতে বলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই আবেদনের ওপর কোনো শুনানি হয়নি। আজিজ আল কায়সারকে প্রভাবশালী কোনো পক্ষের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী তুহিন হাওলাদার অবশ্য বলেন, ‘আসামিপক্ষ থেকে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো আবেদনই করা হয়নি। আবার যেসব শর্তে আজিজ আল কায়সার জামিনে ছিলেন, তার সবক’টিই তিনি ভঙ্গ করেছেন। জামিনের শর্ত ছিল, তিনি পাসপোর্ট আদালতে জমা দেবেন। কিন্তু সেটি না করে এর মধ্যে তিনি বিদেশও ভ্রমণ করেছেন। মামলার প্রতিটি শুনানিতেই আমি জামিন বাতিলের আবেদন জানিয়ে আসছি। আসামিকে কারাগারে না পাঠিয়ে বিচারকের কোনো উপায় ছিল না।’

পরিবার সূত্রে জানা যায়, আজিজ আল কায়সার ও তাবাসসুম কায়সারের ২৮ বছরের সংসার। এ দম্পতির দুই সন্তান বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। তাবাসসুম কায়সার নিজেও সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। একই সঙ্গে পারটেক্স স্টার গ্রুপেরও পরিচালক তিনি। আজিজ আল কায়সারের মালিকানাধীন অন্য কোম্পানিগুলোয়ও স্ত্রী অংশীদার। তবে এক বছরের বেশি সময় ধরে তারা দাম্পত্য কলহে জড়িয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এক পর্যায়ে আজিজ আল কায়সার পুলিশেরও দ্বারস্থ হন। অর্জুন রিচি নামের এক ভারতীয় যুবকের সঙ্গে তাবাসসুম কায়সারের ঘনিষ্ঠতার জেরে এ কলহের সূত্রপাত। অর্জুন রিচি গুলশানের একটি ব্যায়ামাগারের প্রশিক্ষক ছিলেন। লিখিত সেই অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে পুলিশি জেরার মুখে পড়ে অর্জুন রিচি দেশ ছাড়েন বলেও জানা গেছে।

এদিকে দাম্পত্য কলহের জেরে আজিজ আল কায়সারের বিরুদ্ধে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মোট চারটি মামলার আবেদন করেছিলেন স্ত্রী তাবাসসুম কায়সার। আদালত একটি মামলা আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। অন্য তিনটি আবেদন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় রেকর্ড করে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি আজিজ আল কায়সার নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক তখন শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করেন। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ১৬ মার্চ পর্যন্ত জামিনে ছিলেন তিনি।

আজিজ আল কায়সারও স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি মামলা করেছেন বলে তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে। প্রয়াত এমএ হাসেম পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, স্ত্রীর সঙ্গে আজিজ আল কায়সারের দাম্পত্য কলহের সুযোগ নিতে চাইছে প্রভাবশালী একটি পক্ষ। ওই পক্ষটি বহু আগে থেকেই সিটি ব্যাংক দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করে আসছিল। এখন দাম্পত্য কলহের বিষয়টিকে ব্যাংক দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাবাসসুম কায়সার ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর স্ত্রীর ছোট বোন। তবে এ বিষয়ে তাবাসসুম কায়সার বা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আজিজ আল কায়সার ও তাবাসসুম কায়সার দম্পতির দুই সন্তানই বাবার পক্ষ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে তাদের সন্তান আম্মান আল আজিজ জানান, বাবা-মায়ের বিরোধ নিয়ে দুই-তিনদিনের মধ্যে তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন। সেখানেই বিস্তারিত তুলে ধরবেন। 

প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক সিটি ব্যাংক যাত্রা করে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে দেশী উদ্যোক্তাদের গড়ে তোলা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সিটি ব্যাংকের অবস্থান সামনের সারিতে। সিটি ব্যাংকের পর্ষদে এখন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন আনোয়ার গ্রুপের পাট, অটোমোবাইল ও রিয়েল এস্টেট ডিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হোসাইন খালেদ। একই গ্রুপের টেক্সটাইল ডিভিশনের এমডি হোসাইন মেহমুদ আছেন পরিচালক হিসেবে। চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সারের স্ত্রী তাবাসসুম কায়সারও ব্যাংকটির পরিচালক। ব্যাংকটির অন্য পরিচালকরা হলেন আজিজ গ্রুপের এমডি রাজিবুল হক চৌধুরী, পারটেক্স গ্রুপের পরিচালক সৈয়দা শাইরিন আজিজ, পারটেক্স এগ্রো লিমিটেডের এমডি সাভেরা এইচ মাহমুদ প্রমুখ। এছাড়া ব্যাংকে স্বাধীন পরিচালক হিসেবে আছেন ড. সেলিম মাহমুদ ও মতিউল ইসলাম নওশাদ। আইএফসি মনোনীত পরিচালক হিসেবে আছেন রেবেকা ব্রসনান। এছাড়া ব্যাংকটির এমডি ও সিইওর দায়িত্ব পালন করছেন মাশরুর আরেফিন।  

মোবাইল ছেড়ে বইয়ে মন - dainik shiksha মোবাইল ছেড়ে বইয়ে মন ফেসবুক-টিকটক আপাতত বন্ধ থাকছে - dainik shiksha ফেসবুক-টিকটক আপাতত বন্ধ থাকছে কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট - dainik shiksha কলেজে ভর্তির সময় বাড়লো, ক্লাস শুরু ৬ আগস্ট জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৭ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৭ জন চিহ্নিত স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর - dainik shiksha স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর পিএসসির সব পরীক্ষা ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত - dainik shiksha পিএসসির সব পরীক্ষা ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0084130764007568