ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথিতযশা স্থপতি মাজহারুল ইসলামের জন্মদিন আজ। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাজহারুল ইসলাম বাংলাদেশের স্থাপত্য পেশা চর্চার পথিকৃৎ। তিনি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণসহ নানা সময়ে বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছেন।
মাজহারুল কৃষ্ণনগর কলেজ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর পিতার বদলির সুবাদে রাজশাহীতে যান। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ওই কলেজ থেকেই পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক পাস করেন। এরপর শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে প্রকৌশল বিদ্যা পড়া শেষ করেন ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে। দেশ ভাগের পর ১৯৪৭-তে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্র যান এবং অরিগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যের পাঠ নিয়ে আড়াই বছর পর দেশে ফেরেন। একনাগাড়ে ছয় মাসের পরিশ্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ও লাইব্রেরি ভবনের ডিজাইন করেন। এর পর ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বৃত্তি নিয়ে তিনি ট্রপিক্যাল আর্কিটেকচার পড়তে লন্ডনের এএ স্কুল অব আর্কিটেকচারে যান। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের কনস্ট্রাকশন, বিল্ডিং অ্যান্ড ইরিগেশনে। সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে ‘বাস্তুকলাবিদ’ নামে একটি স্থাপত্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এ স্থাপত্য অনুষদ চালু করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এখানে খন্ডকালীন শিক্ষকতাও করেছেন।
মাজহারুল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের মধ্যে রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ও লাইব্রেরি ভবন, খিলগাঁও রেলওয়ে পুনর্বাসন প্রকল্প, নতুন রাঙামাটি শহর পরিকল্পনা, আজিমপুরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্প, ঢাকায় বিসিএসআইআর লাইব্রেরি ভবন, ঢাকার নিপা ভবন, মতিঝিলে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ও জীবন বীমা ভবন, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিলেট ও বরিশালের জন্য পাঁচটি পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট, ঢাকায় সড়ক গবেষণা পরীক্ষাগার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টারপ্ল্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবন, রূপপুরে আণবিক শক্তি কমিশনের আবাসন প্রকল্প, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টারপ্ল্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবন, জয়পুরহাট কয়লা ও সিমেন্ট প্রকল্প, শেরেবাংলা নগরে জাতীয় গ্রন্থাগার ও জাতীয় আর্কাইভ ভবন, ঢাকায় বিশ্বব্যাংক অফিস ভবন, ও ২০ তলা ‘গার্ডেন সিটি’ প্রকল্প।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টের জাতীয় সম্মেলনে সম্মানিত ফেলোশিপ অর্জন, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রথম স্বর্ণপদক অর্জন, ভারতের জেকে সিমেন্ট আয়োজিত স্থাপত্যশিল্পে শ্রেষ্ঠ অবদানের জন্য ‘গ্র্যান্ডমাস্টার অ্যাওয়ার্ড’। প্রথিতযশা এই স্থপতি ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুলাই মৃত্যবরণ করেন।