স্পেনে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে না পারায় ভেঙে পড়েন ফারদিন : ডিবি - দৈনিকশিক্ষা

স্পেনে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে না পারায় ভেঙে পড়েন ফারদিন : ডিবি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪) মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়ায় স্পেনে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্পেনে যাওয়ার প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে না পারায় মানসিকভাবে ভেড়ে পড়েন ফারদিন। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ জন্ম হওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ফারদিন। 
 
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ফারদিন হত্যা মামলায় বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
 
মামলার বাদী ফারদিনের বাবা তার বুয়েটপড়ুয়া ছেলের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে পুত্রশোকে হতবিহ্বল হয়ে আমাতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করে তথ্যগত ভুল ধারার অভিযোগ করার বিষয়টি তদন্তে প্রতীয়মান।
 
জীবনের শেষ মুহূর্তে ‘অস্বাভাবিক আচরণ’ করতে থাকে ফারদিন
 
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বুয়েটের ছাত্র ফারদিন নূর পরশ পারিবারিক জীবনে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় তাকে পড়াশোনার ফাঁকে টিউশনি করাতে হতো। অন্যদিকে, নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্পেনে আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য মনোনীত হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করতে না পারায় হতাশায় ভুগছিলেন। পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে বুয়েটে চলমান পরীক্ষার ফলাফল ক্রমাগত খারাপের দিকে যাওয়ায় বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ করতে না পারায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ জন্ম হয় তার। তাই জীবনের শেষ মুহূর্তে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন, যা ফারদিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিডিআর (কল ডিটেইলড রেকর্ড) পর্যালোচনায় প্রতীয়মান।
 
জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ জন্ম হওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ফারদিন
 
ফারদিন পারিবারিক ও অর্থনৈতিক চাপ, পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়া, স্পেনে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে না পারায়— জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ জন্ম হওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পরে কাউকে কোনো কিছু না বলে সবার অগোচরে ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর বিকেল ৩টা থেকে পরদিন ৫ নভেম্বর দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অস্বাভাবিক আচরণ করেন।
 
এদিন রাত ২টায় যাত্রাবাড়ী মোড় দিয়ে একা হেঁটে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরপাগামী একটি লেগুনায় ওঠেন। এরপর রাত ২টা ২৫ মিনিটের সময় সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর পৌঁছায় এবং ২টা ৩৫ মিনিটের সময় বা তার কিছুক্ষণ আগে ব্রিজের ওপর থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তদন্তকালীন সিডিআর ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় এর সত্যতা পাওয়া যায় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
 
এ ঘটনায় আমাতুল্লাহ বুশরা জড়িত ছিলেন মর্মে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি
 
মামলার তদন্তকালে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে এজাহারনামীয় আসামি আমাতুল্লাহ বুশরাকে গ্রেফতার করা হলেও ব্যাপক ও গভীর তদন্তপ্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে আমাতুল্লাহ বুশরা জড়িত ছিল মর্মে কোনো তথ্য না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। নথি সংযুক্ত সুরতহাল, ময়নাতদন্ত, ভিসারা প্রতিবেদন, আইটি বিশেষজ্ঞের মতামত ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনাটি একটি খুনের ঘটনা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।
 
পুত্রশোকে হতবিহ্বল হয়ে আমাতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করে মামলা
 
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার বাদী ফারদিনের বাবা তার বুয়েটপড়ুয়া ছেলের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে পুত্রশোকে হতবিহ্বল হয়ে আমাতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করে তথ্যগত ভুল ধারার অভিযোগ করার বিষয়টি তদন্তে প্রতীয়মান। এছাড়া মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় বাদীর অভিযোগে বর্ণিত অজ্ঞাতনামা আসামিদের এ ঘটনায় জড়িত থাকার কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি।
 
নিখোঁজের দুদিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা করেন ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা। গত ১০ নভেম্বর ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করে মরদেহ গুম করার অভিযোগে রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় আদালত তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ৮ জানুয়ারি ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার তার জামিন দেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য রয়েছে।
 
ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’র সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছেন। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার নয়ামাটিতে। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফারদিন ছিলেন সবার বড়। তার মেজ ভাই আবদুল্লাহ নূর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই তামিম নূর এ বছর কলেজে ভর্তি হবেন।
 
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলাটি তথ্যগত ভুলে করা হয়েছে। তদন্তে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা আপাতদৃষ্টিতে পেয়েছি। তাই মামলার আসামি বুশরাকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034070014953613