স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জমি দখল, অর্থ আত্মসাৎ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সন্ত্রাসী বলাসহ অর্ধশত দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার সাড়ে ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এই নেতার সাথে ছিল কেরানীগঞ্জের শীর্ষ দুই ভূমিদস্যু সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা। এই ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ভাগিয়ে নিয়েছেন জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদ, জিনজিরা ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্ট্রির কাজির পদ ও জমির ব্যবসা। এসব পদ-পদবী ব্যবহার করে গত ১৫ বছরে কেরানীগঞ্জ উপজেলায় দুর্নীতি ও অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করছেন।
আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কাজী পেশায় থেকে বাল্যবিবাহ পড়ানো, ভূমি দখল, কলেজের অর্থ আত্মসাৎ, নারি কেলেঙ্কারি ও দলীয়করণসহ ৫০টিরও বেশি সুনির্দিষ্ট দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী ছাত্র ও অভিভাবকরা। এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য কেরানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুল হককে দায়িত্ব দিয়েছেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রীনাত ফৌজিয়া।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের এই নেতার বিরুদ্ধে যে ৫০টি সু নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি দায়িত্ব পালন করা, গোপালগঞ্জে শেখ মুজিবের কবরে ফুল দেয়া, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও আঞ্চলিকতা, বৈষম্যকরণ, বিভাজন সৃষ্টি করা, দায়িত্বে অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে অসৌজন্য আচরণ, দলবাজি, একই সাথে লাভজনক প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে কাজী, কলেজের অধ্যক্ষ ও ভূমি ব্যবসায় জড়িত থাকা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে মিলাদের নামে ১০ লাখ ও বিদ্যুৎ খাতে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭১ টাকা আত্মসাৎ করা, বোর্ড পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ক্লাসের ফ্রি ও কোচিং ফি বাবদ অর্থ আত্মসাৎ করা, প্রশংসাপত্র প্রদানে অর্থ আদায় ও আত্মসাৎ, অফিস স্টেশনারি নামে কয়েক লাখ টাকা ও দুটি এসি আত্মসাৎ, নতুন জেনারেটর ক্রয়ের ভাউচার দেখিয়ে পুরান জেনারেটরকে ক্রয়, বিভিন্ন পরীক্ষা ও ভর্তির দায়িত্বে সম্মানী ভাতার টাকা আত্মসাৎ, অডিট রিপোর্টের জন্য শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ, কমিশন বাণিজ্য, প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফরমের টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা রাখা, ছাত্রদের ভর্তি ও উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠান মেরামত ও প্যান্ডেল সাজানোর টাকা আত্মসাৎ,
কেরানীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুল হক বলেন, অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট ৫০টির ও বেশি অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে আবু বক্কর সিদ্দিকের জানান, তিনি দুর্নীতি করেননি। তার অফিস কক্ষ যে সাড়ে ৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে তা শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাসের টাকা। তিনি বলেন, যেসব শিক্ষককে তিনি বিভিন্ন সময় অনিয়মের কারণে শাস্তি দিয়েছেন সেসব শিক্ষকের একটি অংশ তার বিরুদ্ধে ছাত্রদের ব্যবহার করছে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি থাকার কথা এবং গোপালগঞ্জে শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে পুষ্প অর্পণের কথা স্বীকার করেন।