ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
গতকাল সোমবার ফজলুল হক মুসলিম হলের এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ে (দক্ষিণ ভবন) সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শয়নের অনুসারীদের সম্মিলিত গ্রুপ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা।
জানা গেছে, তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী সাব্বির অনিককে ৫০০৬ নং রুম থেকে বের করে সেটিতে তালা লাগিয়ে দেন সাদ্দাম ও ইনানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ওই হলের নেতাকর্মীরা। পরে সৈকতের নেতাকর্মীরা তালা ভেঙে রুমে প্রবেশ করেন। এসময় সৈকতের অনুসারীরা হল ছাত্রলীগের সভাপতির রুম ভাঙচুর চালান।পরবর্তীতে মূল ভবনে হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমের ২০১ নং কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে হল ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা।
দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সৈকতের গ্রুপের ৯ জন এবং সাদ্দাম-ইনানের গ্রুপের ১০-১২ জন আহত হন। এসময় ১০১৫, ৫০০৬, ৩০১০, ৪০০১, ২০০৪, ৪০১০, ৩০১৪, ২০০৯, ৩০০৮, ২০১৮, ৪০১৮, ৩০০৭ কক্ষগুলোতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা এবং ভাঙচুর করা হয়।
তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে আহত হওয়া জিওগ্রাফি বিভাগের ইমামুল হাসান, এপ্লাইড ম্যাথের মাহমুদুল হাসান, পারভেজ, রিদওয়ানুর, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের কল্লোল, কাউসার ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শাহেদের নাম জানা গেছে।
অন্যদিকে সাদ্দাম-ইনান গ্রুপের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবীর, ফলিত গণিত বিভাগের ফুয়াদ বিন রায়হান, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মো. জালাল মিয়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞানের তানজিন আলম, পরিসংখ্যান বিভাগের সাদেক হোসেন, ভূতত্ত্ব বিভাগের আশরাফুলসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হলের একাধিক শিক্ষার্থী।
ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ফজলুল হক হলের দক্ষিণ ভবনে সিট সংক্রান্ত কারণে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়। আমি আমার রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ১০ থেকে ১২ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে রাতের খাবারের আয়োজন করি। খাওয়া শেষে সবাই রুমে অবস্থান করছিলাম। রাত দেড়টার দিকে ৮ থেকে ১০ জন অতর্কিতভাবে দেশীয় অস্ত্রসহ আমার রুমে হামলা করে।
তিনি বলেন, হামলা করে দ্রুতই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলি। এসময় তারা নিজেদের ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারী বলে জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কমিটি হয়েছে মাত্র এক মাস হয়েছে। আমার অনুসারী বলতে কিছু নেই। আমার নির্দেশে কোনো ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রলীগে গ্রুপভিত্তিক রাজনীতি কখনো কাম্য নয়, সকলেই ছাত্রলীগের কর্মী। গতরাতে যে ঘটনা ঘটেছে তার কোনো পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ফজলুল হক মুসলিম হলে যে বা যারা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে যেন বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয় তার অনুরোধ থাকবে। পাশাপাশি ছাত্রলীগও তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ঘটনার বিষয়ে জেনেছি। হল প্রশাসন বিষয়টি দেখবেন, যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।
সার্বিক বিষয়ে ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাসুম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ঘটনার ব্যাপারে আমরা জেনেছি। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সভা থেকে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।