দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: উচ্চ আদালতের চারটি দ্বৈত বেঞ্চকে অন্ধকারে রেখে হত্যা মামলার আসামি মানিক চেয়ারম্যানের জামিন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ রাষ্ট্রপক্ষ। একই সঙ্গে জামিনের বিরুদ্ধে চেম্বার বিচারপতির আদালতে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম জামিন স্থগিত করে আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে গ্রেফতারে পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আদেশ দিয়েছে আদালত।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের গোপনীয় সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন আ. মজিদ। ২০২২ সালের ২৮ মে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ঐ বছরের ২ জুন বদরগঞ্জ থানায় মামলা করেন তার স্ত্রী বিলকিস। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. সাইদার আলীর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মানিক চেয়ারম্যানের নাম আসে।
জবানবন্দিতে সাইদার বলেন, ‘ঘটনার দিন মানিক চেয়ারম্যানের পুত্র তমাল আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। আমি ফোন দিয়ে মজিদকে উপজেলা সোনালী ব্যাংকের কাছে আসতে বলি। এরপর আমি, মানিক চেয়ারম্যান, তমাল, হাফিজুর, সাঈদসহ মানিক চেয়ারম্যানের ওয়ার্কশপে যাই। এরপর তিনটি মোটরসাইকেলে সাত জন তাকে নিয়ে কালু পাড়ায় চেয়ারম্যানের গ্রামের বাড়িতে যাই। একটু পর মানিক চেয়ারম্যানের হুকুমে তার শয়নকক্ষে নিয়ে আমরা মজিদের গলায় ও বুকে কিলঘুষি মারি এবং বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে ড্রাইভার হাফিজুর। এটা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বললে ভিকটিম জ্ঞান হারান। হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়।’
চারটি বেঞ্চে করা জামিন আবেদনে তথ্য গোপন:এই মামলায় ২০২২ সালের ১১ আগস্ট হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন চান চেয়ারম্যান। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগাম জামিন না দিয়ে ছয় সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। আত্মসমর্পণের এই আদেশ পালন না করে এবং গোপন রেখে ঐ বছরের ১৮ অক্টোবর বিচারপতি পৃষ্ঠা ৬ কলাম ৬
মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে আবারো আগাম জামিন চান। আদালত আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়ে ছয় সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। কিন্তু আত্মসমর্পণ না করে ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টে তৃতীয় বারের মতো আগাম জামিন চান। এই জামিন আবেদনেও হাইকোর্টের পূর্বের দুটি বেঞ্চের দেওয়া আত্মসমর্পণের আদেশ গোপন করা হয়। বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজউদ্দিন খানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ ছয় সপ্তাহের মধ্যে আসামিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এই তিনটি বেঞ্চের আত্মসমর্পণের আদেশ প্রতিপালন করেনি আসামি।
গত বছরের ৩১ মে চেয়ারম্যান ও তার ছেলে তমালসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় চার্জশিট দেয় বদরগঞ্জ পুলিশ। চার্জশিট দাখিলের সাড়ে পাঁচ মাস পর ১৪ নভেম্বর এই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান চেয়ারম্যান। বদরগঞ্জ আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাসিনুর রহমান মিলন জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠান। কারাগার থেকে হাইকোর্টে চতুর্থ বারের মতো জামিন চান আসামি। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মো. আলী রেজা গত ২১ জানুয়ারি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। দুই দিন পর আসামি কারাগার থেকে বেরিয়ে যান। একের পর এক তথ্য গোপন করে জামিন হাসিলের বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আসে। এরপরই জামিন বাতিল চেয়ে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রবিবার আবেদনের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী এবং আসামির পক্ষে আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন শুনানি করেন।