২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস নাগাদ একটি সাদা হাঙরকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এক দল বিজ্ঞানী। সঙ্গে ছিলেন এক জন তথ্যচিত্র পরিচালক। সেই পরীক্ষা চলাকালীনই ঘটে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। পানির অতলে টেনে নিয়ে দিয়ে ওই সাদা হাঙরটিকে মেরে ফেলে কোনো এক অজানা সামুদ্রিক দানব!
সাদা হাঙরকে সমুদ্রের সব থেকে হিংস্র প্রাণী বলেন বেশির ভাগ বিজ্ঞানী। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা যে সাদা হাঙরটির উপর পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন সেটি ছিল প্রায় ৯ ফুট লম্বা। এই হিংস্র শিকারির শিকার কে করল, তা নিয়ে তৈরি হয় একাধিক জল্পনা।
প্রাথমিকভাবে হাঙরটির শরীরে একটি ট্র্যাকার লাগিয়ে তার উপর নজরদারি চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। হাঙরটি সমুদ্রের কতটা গভীরে রয়েছে, সেই জায়গার তাপমাত্রা কত, তা-ও সময়ে সময়ে জানা যাচ্ছিল ওই ট্র্যাকারের মাধ্যমে।
কিন্তু পরীক্ষা শুরুর চার দিনের মাথায় বিজ্ঞানীরা হঠাৎই দেখেন, হাঙরটি প্রচণ্ড গতিতে সমুদ্রের গভীরে নেমে যাচ্ছে। সাদা হাঙরের যা গতি, তাতে অত তাড়াতাড়ি সমুদ্রের নীচের দিকে যাওয়া সম্ভব নয়। যেন কোনো এক অজানা শক্তি বিশাল হাঙরটিকে নীচের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।
বিজ্ঞানীরা দেখেন কয়েক মুহূর্তেই হাঙরটি সমুদ্রের প্রায় ২ হাজার ফুট গভীরে পৌঁছে গেছে।
একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা দেখেন, ওই জায়গায় পানির তাপমাত্রা হঠাৎ করে বাড়তে আরম্ভ করেছে। প্রাথমিকভাবে ওই জায়গার তাপমাত্রা ছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এক ধাক্কায় তা বেড়ে প্রায় ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, নিমেষের মধ্যে ওই সাদা হাঙরের শিকার করে ফেলেছে অজানা সামুদ্রিক দানব। এবং ট্র্যাকার দানবের পেটে যাওয়ায় তাপমাত্রার আকস্মিক বৃদ্ধি হয়েছে।
এরপরই বিষয়টি নিয়ে একাধিক জল্পনা তৈরি হয়। অনেকে দাবি তোলেন, সাদা হাঙরের শিকার করা কোনো সাধারণ সামুদ্রিক জীবের ক্ষমতার বাইরে। পাশাপাশি দাবি করা হয়, মেরে ফেলার জন্য হাঙরটিকে কেউ সমুদ্রের অত গভীরে নিয়ে যাবে না।
গভীর সমুদ্রে হাঙর হত্যার খবর প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্ব জুড়ে হইচই পড়ে যায়। বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত দিতে শুরু করেন। জল্পনা তৈরি হয় অতিকায় সামুদ্রিক দানব গডজ়িলা এবং ক্র্যাকেন-এর অস্তিত্ব নিয়েও।
গবেষকদের একাধিক দল অতিকায় দানবের তথ্য পেতে সমুদ্রের ওই জায়গায় জাহাজ নিয়ে পরীক্ষা চালায়।
পুরো ঘটনাটি নিয়ে ‘দ্য সার্চ ফর দ্য ওশানস সুপার প্রিডেটর’ নামে অস্ট্রেলিয়ায় একটি তথ্যচিত্রও তৈরি হয়।
তথ্যচিত্র নির্মাতা ডেভ রিগস বলেছেন, আমার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন আসছিল যে, কী করে কোনো স্বাভাবিক সামুদ্রিরক প্রাণী এতো বড় একটি সাদা হাঙরকে খেয়ে ফেলল।
তবে সেই ঘটনার প্রায় ১০ বছর পর রহস্যের সমাধান হয়। দীর্ঘ দিন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে সেই হাঙর হত্যা রহস্যের কিনারা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার ওই বিজ্ঞানীদের দাবি, ওই অতিকায় সামুদ্রিক দানব আসলে অন্য একটি অতিকায় সাদা হাঙর। হরমোনের সমস্যার জন্য ওই হাঙরটি আকারে স্বাভাবিকের থেকে বড় ছিলো। সেই দৈত্যাকার অন্য সাদা হাঙরের কামড়েই মৃত্যু হয়েছে প্রথম হাঙরটির।
যদিও অনেকেই এই তত্ত্ব মেনে নেননি। অনেকের মতে, শুধু সত্য লুকিয়ে রাখতেই এই গল্প ফেঁদেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা। এর নেপথ্যে আন্তর্জাতিক চাপ ছিলো বলেও একাংশের মত।
সূত্র: আনন্দবাজার