ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আজ মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বেলা ১২টায় কলেজ পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন বলেন, ‘শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় আমাদের কলেজের ছেলেরা ন্যাশনাল মেডিকেলে গিয়েছিল। পরে ঘটনা সংঘর্ষের দিকে যাওয়া শুরু করলে আমরা ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি পাঠাই। কিন্তু ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ সুস্থ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করেনি। এরপরই শুরু হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। তারা সুস্থ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করলে এতো সংঘর্ষ হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও সংঘর্ষে জড়ায়। সম্পৃক্ত সব কলেজ কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়ে সংঘর্ষে জড়াতে নিষেধ করেছে কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের কাজ করেছে। মূলত সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল থেকে মোল্লা কলেজকে উড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা থেকে সংঘর্ষ ব্যাপক আকার নিয়েছে।’
সংঘর্ষের আগে বসে সমাধানের চেষ্টা করেছেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলেও সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রিন্সিপাল আমাদের সঙ্গে বসেনি। আমরা বারবার চেষ্টা করেছি।’
সংঘর্ষে রাজনৈতিক দলের ইন্ধন আছে কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগেও কুচক্রী মহল ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। ফলে এ সংঘর্ষেও কুচক্রী মহল সুযোগ নিয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো দলের চক্রান্তে আছে কিনা সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’
ঘটনার সূত্রপাত
পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসার অবহেলায় মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় রোববার (২৪ নভেম্বর) ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই ‘সুপার সানডে' কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গণ্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ওই হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে সোমবার ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রণক্ষেত্র ডেমরা এলাকা
সোমবার সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে আসেন।
এসময় নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ডেমরা সড়ক সংলগ্ন মোল্লা কলেজে হামলা চালান। এসময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান।
এসময় কলেজটির ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন তারা। পরে দুই পক্ষ দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা। এতে ছাত্র ও সাধারণ মানুষসহ শতাধিক আহত হন। দুপুরে এই হামলা-সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ সময় কলেজটির বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম নিয়ে যান হামলাকারীরা। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পুলিশ সদস্যরা। এরইমধ্যে কবি নজরুলসহ অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।