রাজধানীর শাহবাগ থানায় নিয়ে আটকে রেখে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে নির্মমভাবে নির্যাতনের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তদন্তে সাময়িক বরখাস্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশিদের দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
পাশাপাশি পুলিশের এডিসি সানজিদা আফরিন এবং তার স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক এবং ঘটনায় যুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদেরও দায় পেয়েছে ডিএমপি।
তদন্ত কমিটির একটি সূত্র সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে জানিয়েছে, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কমিটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে। জানা যায়, ওই দিন সানজিদা আফরিন বারডেমে ডাক্তার দেখানোর জন্য এডিসি হারুনের সহায়তা নেন। যখন তার ইটিটি করা হচ্ছিল, ওই সময় তার স্বামী মামুন সেখানে হাজির হন। এ সময় মামুনের সঙ্গে ছিলেন ছাত্রলীগের নেতারা। সেখানে হারুনের সঙ্গে মামুন ও ছাত্রলীগ নেতাদের কথা কাটাকাটি থেকে একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সানজিদা পরে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মামুনই আগে এডিসি হারুনের গায়ে হাত তুলেছিলেন।
এদিকে এ ঘটনার পর এডিসি হারুন শাহবাগ থানা পুলিশকে দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের থানায় নিয়ে যান। সেখানে তাদের প্রচণ্ড শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ঘটনাটি জানাজানি হলে দেশজুড়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা হয়।
এ ঘটনা তদন্তেই তিন সদস্যের কমিটি করে ডিএমপি। কমিটির সভাপতি ডিএমপি সদর দপ্তরের উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) আবু ইউসুফ। বাকি দুই সদস্য হলেন রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শাহেন শাহ ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা, মতিঝিল বিভাগ) মো. রফিকুল ইসলাম।
তদন্ত কমিটিতে প্রথমে দুই কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছিল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য। তবে এর মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পারলে কমিটি আরও পাঁচ দিন সময় চেয়ে নেয়। সেই সময় শেষে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে কমিটির।
এদিকে ওই ঘটনার জের ধরেই গত ১০ সেপ্টেম্বর এডিসি হারুনকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট শাখায় সংযুক্ত করে ডিএমপি। দুপুরে তাকে প্রত্যাহারের এ আদেশ হলেও পরে সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আরেক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে পদায়ন করা হয় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে।
এর পরদিন ১১ সেপ্টেম্বর আবার এডিসি হারুন-অর-রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। তাতে বলা হয়, এডিসি হারুনকে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে পরদিনই বদলে যায় সে আদেশ। একই শাখা থেকে ১২ সেপ্টেম্বরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, হারুনকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।