হিজরি নববর্ষ আজ, কী এর ইতিহাস ও তাৎপর্য - দৈনিকশিক্ষা

হিজরি নববর্ষ আজ, কী এর ইতিহাস ও তাৎপর্য

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

বিদায় নিয়েছে আরবি বছর ১৪৪৫। আজ সোমবার পয়লা মহররম। শুরু হল হিজরি নববর্ষ ১৪৪৬। বাংলাদেশের আকাশে রোববার (৭ জুলাই) সন্ধ্যায় মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামী ১৭ জুলাই (বুধবার) সারা দেশে পালিত হবে পবিত্র আশুরা।

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হিজরি সনের শুভসূচনা হয়েছিল। তাই মুসলমান এবং আরব বিশ্বে হিজরি নববর্ষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে দাপ্তরিক কাজকর্ম হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে।

পবিত্র কোরআনুল কারিম ও হাদিস শরিফে মহররম মাসকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বলা হয়েছে। কোরআনের ভাষায় এটি সম্মানিত চার মাসের ‘আরবাআতুন হুরুম’ অন্যতম।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় বারোটি মাস আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে।’ (সুরা তওবা: ৩৬)

এ মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত- এক হাদিসে নবী করিম সা. বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর কাছে মহররমের রোজা হল সর্বশ্রেষ্ঠ’ (মুসলিম-৩৬৮)।

দিন, মাস আর সনের হিসাব ছাড়া বর্তমান পৃথিবীতে কোনো কাজই ঠিকমতো চলে না। আমাদের দেশে তিনটি বর্ষপঞ্জির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজকর্ম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অপরিহার্যভাবে ব্যবহার করা হয়। হিন্দু-সম্প্রদায়ের পূজা-পার্বণ, বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ আর কৃষিজীবীদের আবাদি মৌসুমের হিসাবের জন্য বাংলা ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়। আর মুসলমানদের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, শবেবরাত, শবেকদর, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়াবলির জন্য হিজরি সনের হিসাব অপরিহার্য।

হিজরি সন গণনার ইতিহাস ও তাৎপর্য

রাসূল সা. ও তার সঙ্গীদের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই আরবি মহররম মাসকে হিজরি সনের প্রথম মাস ধরে সাল গণনার শুরু হয়। আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে তথা দ্বীনের স্বার্থে পবিত্র মক্কা থেকে মদিনায় রাসূল সা. ও তার সাহাবিদের হিজরতের বছর থেকেই হিজরি সনের সূচনা হয়।

খলিফা হজরত ওমর ফারুক রা. -এর শাসনামলে ১৬ হিজরি সনে প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু মূসা আশআরি রা. ইরাক ও কুফার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একদা হজরত আবু মূসা আশআরি রা. খলিফা ওমর রা.-এর খেদমতে এ মর্মে পত্র লিখেন যে, আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশ সংবলিত যেসব চিঠি আমাদের কাছে পৌঁছে তাতে দিন, মাস, কাল, তারিখ ইত্যাদি না থাকার কারণে কোন চিঠি কোন দিনের তা নিরূপণ করা আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। এতে করে আমাদের নির্দেশ কার্যকর করতে সমস্যা হয়। চিঠির ধারাবাহিকতা না পেয়ে আমরা অনেক সময় বিব্রত বোধ করি।

হজরত আবু মুসা আশআরির চিঠি পেয়ে হজরত উমর রা. এ মর্মে পরামর্শসভার আহ্বান করেন যে, এখন থেকে একটি ইসলামী তারিখ প্রবর্তন করতে হবে। ওই পরামর্শসভায় হজরত উসমান রা., হজরত আলী (রা.)সহ বড় বড় অনেক সাহাবি উপস্থিত ছিলেন।

উপস্থিত সকলের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে ওই সভায় ওমর রা. সিদ্ধান্ত দেন ইসলামী সন প্রবর্তনের। তবে কোন মাস থেকে বর্ষের সূচনা করা হবে তা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়।

কেউ কেউ এ মত পোষণ করেন- রাসূল সা.- এর জন্মের মাস রবিউল আওয়াল থেকে বর্ষ শুরু করার। আবার কেউ কেউ মত দেন রাসুলের ওফাতের মাস থেকে বর্ষ শুরু করা হোক। অন্যদের মতে, রাসূল সা.-এর হিজরতের মাস থেকে বর্ষ করা হোক।

এভাবে নানা মতামত আলোচিত হওয়ার পর হজরত উমর রা. বললেন, হুজুর সা.-এর জন্মের মাস থেকে হিজরি সনের গণনা শুরু করা যাবে না। কারণ খ্রিষ্টান সম্প্রদায় হজরত ঈসা আ.-এর জন্মের মাস থেকেই খ্রিষ্টাব্দের গণনা শুরু করেছিল। তাই রাসূল সা.-এর জন্মের মাস থেকে সূচনা করা হলে বাহ্যত খ্রিষ্টানদের অনুসরণ ও সদৃশতা হয়ে যায়, যা মুসলমানদের জন্য পরিত্যাজ্য।

এ সম্পর্কে রাসুল বলেন- ‘তোমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বিরোধিতা করো’ (বুখারি ও আবু দাউদ শরিফ)।

অপর দিকে, হুজুর সা.-এর ওফাত দিবসের মাস থেকেও গণনা শুরু করা যাবে না, কারণ এতে হুজুর সা.-এর মৃত্যু ব্যথা আমাদের মাঝে বারবার উত্থিত হবে। পাশাপাশি অজ্ঞ যুগের মৃত্যুও শোক পালনের ইসলামবিরোধী একটি কুপ্রথারই পুনরুজ্জীবন ঘটবে।

হজরত ওমর রা.-এর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যের সঙ্গে হজরত উসমান রা. ও হজরত আলী রা. একবাক্যে সহমত পোষণ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওমর ফারুক রা. হিজরতের বছর থেকেই ইসলামী দিনপঞ্জি গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জমাদিউল উলা ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে।

হিজরি সন হচ্ছে মুসলমানদের সন। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এ সনের অনুসরণ করা। এ ক্ষেত্রে উদাসীনতা করা উচিত নয়। ইসলামী ফিকাহবিদরা চান্দ্রবর্ষের হিসাব রাখাকে মুসলমানদের জন্য ফরজে কিফায়া বলেছেন। অর্থাৎ কেউ কেউ এর হিসাব রাখলে সবার দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সবাই যদি এ বিষয়ে উদাসীনতা দেখায় তাহলে প্রত্যেক মুসলমানকে গুনাহগার হতে হবে। চান্দ্রমাসের হিসাবের অনুসরণ নবী সা. ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত। যাদের অনুসরণ আমাদের জন্য পুণ্যময় ও কল্যাণকর আমল।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047869682312012