পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তাফালবাড়িয়া হাসানিয়া আলিম মাদ্রাসায় ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের আলিম পরীক্ষায় মোট ১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেউ পাশ করেনি। ১৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাদরাসাটিতে ১৪ জন শিক্ষক। প্রতি মাসে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন নিচ্ছেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত তাফালবাড়িয়া হাসানিয়া আলিম মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পর ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়। মাদরাসাটিতে বর্তমানে ৬ জন কর্মচারী রয়েছেন।
প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানটিতে ফলাফল খুবই খারাপ হয়। ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বহীনতা ও শিক্ষকদের চরম অবহেলায় বহু বছর ধরেই শিক্ষার্থী প্রায় শূন্যের কোঠায়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের কোঠা ধরে রাখতে যুগ যুগ ধরে ভাড়া করা শিক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয়ানো হয়। যে কারণে বিভিন্ন সময় ২-৫ জন ছাড়া সবাই অকৃতকার্য হয়ে আসছে। তবে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল ক্ষেভের সঙ্গে ঘটনা অকপটে স্বীকার করেন।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পরীক্ষার হল থেকে ভাড়া করা শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারও করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যেসব শিক্ষক অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন নিচ্ছেন তাদের থেকে সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মো. খলিলুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মঞ্জুরুল হক ১০ হাজার করে টাকা নিতেন বলে প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া জানান।
সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিন ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মাসুম বিল্লাহসহ একাধিক শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের এমন দৈন্যদশার জন্য সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা মো. খলিলুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতিদের দায়ী করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, মাদরাসাটি প্রতিদিন খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। শিক্ষক-কর্মচারীরা গল্প-গুজব করে সময় কাটিয়ে বাড়িতে চলে যান। বছরের দুই-এক সময় অফিসাররা আসেন আবার চলে যান। প্রতিষ্ঠানের কোনো উন্নতি দেখলাম না। প্রতিষ্ঠানের এমন দৈন্যদশা সম্পর্কে একাধিকবার লেখালেখি হলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রুস্তুম আলী বলেন, একজনও পাস করল না, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেখা প্রয়োজন।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মঞ্জুরুল কবির শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের কারণে মাদরাসার এ অবস্থা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর এ কে এম আবুল খায়ের বলেন, ম্যানেজিং কমিটি ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কারণে মাদরাসাটির এ অবস্থা। আমি চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠানের মান ফিরিয়ে আনার জন্য।