কুমিল্লায় ১৮ বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হলো ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত নগরীর দক্ষিণ কান্দিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার্থী সংকটসহ নানা জটিলতায় ২০০৪ সালে প্রাচীন এ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের তৎপরতায় ৮৩ বছরের পুরোনো এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পুনরায় চালু হয়। বিদ্যালয়টি সব সংকট কাটিয়ে নগরীর অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে পুরোদমে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কমল চন্দ্র ভট্টাচার্য নামে এক শিক্ষানুরাগী ১৯৪০ সালে নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকায় দক্ষিণ কান্দিরপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নাম ছিল কালীতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় সারা দেশে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ করা হয় তার মধ্যে কুমিল্লার কালীতলা বিদ্যালয় অন্যতম। জাতীয়করণের সময় এটি দক্ষিণ কান্দিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে পুনরায় নামকরণ করা হয়। একসময় শিক্ষার্থীদের পড়ার শব্দে মুখর থাকা বিদ্যালয়টি ছাত্র সংকটে ২০০৪ সালের মাঝামাঝি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৮ বছর বন্ধ থাকার পর এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নগরীর দক্ষিণ কান্দিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
সিটি করপোরেশনের আর্থিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের পুরোনো টিনের ঘরটিকে মেরামত করা হয়। গত ১ জানুয়ারি বই উৎসবের দিন শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই সরবরাহের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়। এরপর থেকেই চলছে নিয়মিত পাঠক্রম। বিদ্যালয়টির জন্য একটি নতুন ভবন বরাদ্দের উদ্যোগও নিয়েছে শিক্ষা বিভাগ। ৭৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। শিক্ষক আছেন তিনজন। কাকলী রায় ও নিলুফার ইয়াসমিন নামে দুজনকে সহকারী শিক্ষক এবং ফারজানা হায়দার নামে একজনকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্মৃতিধন্য স্কুলটিতে পাঠদান করতে পেরে খুশি শিক্ষকরাও।
শিক্ষাবিদ ও গবেষক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক জানান, দক্ষিণ কান্দিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত একটি বিদ্যাপীঠ। নানা সংকটের কারণে ১৮ বছর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। এটি নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। সবার সহযোগিতায় এ প্রতিষ্ঠানটি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে গড়ে তোলা যাবে। বর্তমানে স্কুলটির যে অবস্থান ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষ করেই ব্যস্ত রাস্তায় পা ফেলে বাড়ি ফেরে। বিষয়টিকে মাথায় রেখেই স্কুলের ভবন নির্মাণ করা শ্রেয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাকলী রায় বলেন, প্রাচীন এ বিদ্যালয়ে আবারও পাঠদান শুরু হয়েছে। আর আমি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, তিনটি রুমে ক্লাস হয়। একেকটি রুমে দুই শ্রেণির ক্লাস নিতে হচ্ছে। সামনের বছর ছাত্রছাত্রী আরও বাড়বে। আমরা নগরীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করব। প্রধান শিক্ষক ফারজানা হায়দার বলেন, আশপাশের কিন্ডারগার্টেন কিংবা বেসরকারি স্কুলের চেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত পড়াশুনা হয়। অনেক অভিভাবকই আগ্রহী হচ্ছেন। স্কুলটি পুরোনো হলেও আমি স্কুলটি নিয়ে আশাবাদী।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন। এখানে একটি ছয়তলা ভবনের পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু স্কুলটির জায়গা কম তাই নিচতলা সমাবেশের জন্য খালি রেখে ভবনটি তৈরি করা হবে। পাশে কালীতলা মন্দির কর্তৃপক্ষও স্কুলের নিচতলা ব্যবহার করতে পারবে।