অবৈধভাবে অতিরিক্ত বেতন ভোগ করা মাদরাসার ২২ জন অধ্যক্ষ-সুপার ও সহকারী প্রধানের এমপিও বন্ধ হচ্ছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) বাবদ অতিরিক্ত বেতন ভোগ করে আসছিলেন। অতিরিক্ত বেতন নেয়া এসব মাদরাসা প্রধান ও সহকারী প্রধানদের চিহ্নিত করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। অতিরিক্ত নেয়া টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে শোকজ করা হয়েছে।
এসব তথ্য দৈনিক আমাদের বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শোকজের জবাব দেয়ার পর অতিরিক্ত টাকা নেয়া মাদরাসা প্রধান ও সহকারী প্রধানের এমপিও স্থগিত করা হবে। ইতোমধ্যে তাদেরকে বেতন বাবদ নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। পরে তাদের বেতন কমিয়ে অতিরিক্ত নেয়া অংশ বাদ দিয়ে এমপিও চালু করা হবে।
অতিরিক্ত বেতন ভোগ করেছেন এমন তালিকায় আছেন ৬ অধ্যক্ষ, ২ সুপার এবং ১৪ জন সহকারী সুপার। এরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ সদরের রাওজাতুজ সালেহীন আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ শুক্কুর আলি মুল্লা, ভোলার চরফ্যাশনের আনজুরারহাট ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. ইমাম হোসাইন, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার দমরাকান্দি এন আই আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. জাকারিয়া, চাপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নাচোল বেগম মহসিন আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. ইসহাক, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পিরেরহাট আর সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশৈংকৈল উপজেলার রাণীশৈংকৈশ দাখিল মাদরাসার সুপার মো. আজিম উদ্দিন, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কালাই সরদার চর এস আর দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. মহসিন উদ্দিন, বরিশালের কতোয়ালি উপজেলার দুর্গাপুর এইচ এম দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. মনছুর আলী, ফরিদপুরের কতোয়ালি উপজেলার চুনারঘাট দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. ফকরুদ্দিন, পঞ্চগড় সদর উপজেলার গোলহাট আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. ইয়াসিন আলি, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রামজীবনপুর এম ইউ দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. জি এম আব্দুস সবুর, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার ধলিগনি দাখিল মাদরাসার সুপার মো. আবু আহমদ মিয়া, সহকারী সুপার মো. নজরুল ইসলাম, সহকারী সুপার মো. আব্দুল্লাহ, জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার শাইরিঘাট টেক হারাই দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার আবু তালেব, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বীর টারা আই দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. রেজাউল হক, সহকারী সুপার এম কাসেম, নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার রুকনপুর আদর্শ দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. ইসহাক আলী, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশৈংকৈল উপজেলার বোরহানিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. আতিউর রহমান, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার চকবালা আলিমউদ্দিন দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. খলিলুর রহমান, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার রস্তমনগর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. শামসুল ইসলাম সরকার ও সহকারী সুপার এজেডএম রেজাউল ইসলাম।
জানা গেছে, এক স্তরে এমপিওভুক্ত কোনো মাদরাসার পরবর্তী স্তর এমপিওভুক্ত হলে আগের প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধানদের নতুন স্তরের প্রশাসনিক পদগুলোতে এমপিওভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও বিশেষ বিবেচনায় ওইসব পদে থাকতে পারেন। যেমন কোনো দাখিল মাদরাসা আলিম স্তর নতুন করে এমপিওভুক্ত হলে এবং ওই মাদরাসার সুপার ও সহকারী সুপারের আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ হওয়ার শিক্ষাগত ও অভিজ্ঞতার যোগ্যতা না থাকলেও তারা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে থাকতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে তারা মূল পদের এক কোড নিচে তাদের বেতন নির্ধারিত হয়।
এমপিওভুক্ত মাদরাসার এমন ২২ প্রধান ও সহকারী প্রধানরা একধাপ নিচে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত হলেও পরে অবৈধভাবে তাদের বেতন মূলপদের সমপরিমাণ নির্ধারিত হয়। এসব প্রধান ও সহকারী প্রধানের বেশিরভাগ দীর্ঘদিন তাদের প্রাপ্য কোডের এক কোড ওপরে এমপিও পাচ্ছেন। তবে তারা কীভাবে তাদের এমপিও কোড বাড়িয়ে অতিরিক্ত বেতন ভাতা নিচ্ছেন সে বিষয়ে জানেন না অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ শাখার সহকারী পরিচালক মো. লুৎফর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘অতিরিক্ত বেতন নেয়া ২২ জন প্রধান এবং সহকারী প্রধানকে শনাক্ত করে গত ৪ জুন তাদের শোকজ করা হয়েছে। তাদের অতিরিক্ত নেয়া বেতনের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তথ্য গোপন ও জালিয়াতি করে অভিজ্ঞতাবিহীন উচ্চতর পদে সুবিধা গ্রহণ করা মাদরাসার এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী আর্থিক বিধি লঙ্ঘন। তাই অতিরিক্ত নেয়া টাকা সরকারি কোষাগারে চালানের মধ্যেমে ফেরত দিতে বলা হয়েছে অভিযুক্তদের। আর তথ্য গোপন করে জাল-জালিয়াতি ও অভিজ্ঞতাবিহীন উচ্চতর পদের সুবিধা নেয়ায় কেনো এমপিও স্থগিতসহ স্থায়ীভাবে বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে না তার জবাব অধিদপ্তরের পাঠাতে বলা হয়েছে। শোকজের জবাব পাওয়ার পর তাদের এমপিও স্থগিত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘মাদরাসার ওই ২২ জন প্রধান ও সহকারী প্রধানের মধ্যে ২১ জন এমপিওভুক্ত হয়েছিলেন যখন এমপিওর প্রক্রিয়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ছিলো। বিশেষ বিবেচনায় এক কোড নিচে এমপিওভুক্ত হলেও তারা কোনো না কোনোভাবে তাদের এমপিওর কোড বাড়িয়ে নিয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত বেতন ভোগ করছেন। নানা মাধ্যমে তাদের বিষয়ে জানতে পেরে আমরা মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিও প্রক্রিয়াকরণের সফটওয়্যার মেমিসের বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে অতিরিক্ত বেতন ভোগ করা ওই ২২ জন প্রধান ও সহকারী প্রধানকে চিহ্নিত করেছি।’
কর্মকর্তারা বলছেন, শোকজের জবাব দেয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধানদের এমপিও স্থগিত করা হবে। তারা অতিরিক্ত টাকা সরকারকে ফেরত দিলে তাদের বেতন কমিয়ে তাদের প্রাপ্য গ্রেডে নিয়ে এসে এমপিও পুনরায় চালু করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত বেতন নেয়া প্রতিষ্ঠান প্রধানদের একজন নারায়ণগঞ্জ সদরের রাওজাতুজ সালেহীন আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ শুক্কুর আলি মুল্লা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়। ছয় কোডে এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও আমার এমপিওভুক্তি হয় পাঁচ কোডে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে কিছু না জানানোয় আমিও নিজ থেকে তা সংশোধন করিনি। অধিদপ্তরের দেয়া শোকজ পেয়েছি। আমি ইতোমধ্যে কোড সংশোধন করে ফেলেছি, অতিরিক্ত নেয়া টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছি। শোকজেরও জবাব দেবো।’
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।