বাংলাদেশে ২৬ লাখ ভারতীয় চাকরি করেন উচ্চ বেতনে, যেখানে বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার পাঠ চুকিয়ে চাকরির জন্য হাহাকার করে এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে পায়ের জুতো ক্ষয় করেও চাকরি পাযন না। দেশের মেধাবীদের চাকরি হয় না, কিন্তু ভারতীয়দের ঠিকই ‘জোর করে’ ‘প্রভাব খাটিয়ে’ বিভিন্ন সেক্টরে চাকরিতে ঢুকিয়ে দেয়া হতো।
আর আমাদের মেধাবীরা চাকরির জন্য বারবার বিভিন্ন দরজায় ঘুরতে ঘুরতে সব দরজা যখন বন্ধ হয়ে যেতো, তখন তারা ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত রিকশা চালাতে হতো কিংবা পথে-ঘাটে পান-চা-সিগারেট বিক্রি করতে হতো। অনেকে এসবের ভার সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এমন বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমাদের মেধাবীদের কৌশলে ব্যর্থ করে দিয়ে ঠিকই সেসব জায়গাগুলোতে ভারতীয়দের ঢুকিয়ে দেয়া হতো। আর বলা হতো, এদের তো ‘যোগ্যতা’ নেই। তাহলে যোগ্যতার মাপকাঠি কী? ভিনদেশি হয়েও দেশের ভেতরে ভারতীয়রা কীভাবে কোন শক্তিবলে দেশের চাকরির বাজার নিমন্ত্রণ করে?
ব্রিটিশদের মতো ভারত বাংলাদেশে আরেক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে, যেটাকে ‘নিউ-ইম্পেরিয়ালিজম’ বলতে পারি। বাংলাদেশের সব সেক্টরে ভারতীয়দের ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে সুকৌশলে। অথচ প্রতিবছর এদেশের শিক্ষিত বেকাররা পথে পথে ঘুরেও তাদের কপালে চাকরি জুটে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে শিক্ষিত বেকার ২৬ লাখ ৪০ হাজার।
যে দেশে শিক্ষিত বেকার ২৬ লাখ ৪০ হাজার সেখানে ২৬ লাখ ভারতীয় কীভাবে উচ্চ বেতনে চাকরি করেন? তাদের বেতন হয় ডলারে! প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন অর্থাৎ ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স ভারতে চলে যাচ্ছে। রেমিট্যান্স আয়ে ভারতের চতুর্থ বড় উৎস বাংলাদেশ। কাগজে-কলমে বাংলাদেশ নাম থাকলেও এতোদিন দেশটাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতো ভারত। একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে আরেকটি রাষ্ট্র কি এভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ‘দুরভিসন্ধির’ পরিকল্পনাগুলোর একটি এটি।
এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে ভারতীয়দের ঢুকিয়ে দেয়া হয়নি। অথচ সেখানে ঠাঁই পায়নি বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশিরা নিজ দেশেও যেনো পরবাসী। ব্রিটিশরা যেভাবে বাঙালিকে দীর্ঘকাল দাস বানিয়ে রেখেছিলো ভারতও ঠিক আমাদের ওভাবেই দাস বানিয়ে রাখার খেলায় মেতে ওঠেছে।
যেখানে দেশে ২৬ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষিত বেকার সেখানে ২৬ লাখ ভারতীয়র চাকরি করা আমাদের কী বার্তা দেয়। এমন ঘটনা প্রমাণ করে বাংলাদেশে ভারতের আগ্রাসন কেমন। বাংলাদেশের শিক্ষিত প্রজন্ম নিজ দেশে বেকার ঘুরে আর ভারতীয়রা এদেশে উচ্চ বেতনে চাকরি করে। একটা রাষ্ট্রকাঠামো কতোটা ভঙ্গুর হলে এমন অবস্থা হতে পারে!
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসকে ভারতীয়রা যে যে সেক্টরে চাকরি করছে সেখান থেকে হটিয়ে দেশের মেধাবী যোগ্যদের বসাতে হবে-এতোদিন যাদের সব যোগ্যতা থাকার পরও ‘শিক্ষিত বেকার’ তকমা নিয়ে পথে পথে ঘুরতে হয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে এতোদিন কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে-এটি তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ রকম সব সেক্টরেই রয়েছে ভারতের আগ্রাসন। সর্বোপরি, ভারতের আগ্রাসন রুখে দিতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট