বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনার মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে ফুটবল আর ভালোবাসা। মেসিদের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসা এখন বিশ্ববাসী জানে। কাতার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মানুষের উন্মাদনা চমকে দিয়েছে তাদের।
আর্জেন্টিনার ফুটবলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার কথা আগে থেকেই জানতো তারা। তবে কাতার বিশ্বকাপে সেই ভালোবাসার প্রভাব সরাসরি পড়েছে। তাই দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও গভীর করতে বিশ্বকাপজয়ী দেশটি ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় দূতাবাস চালুর ঘোষণা দিতে যাচ্ছে।
আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ওই ঘোষণা দেবেন আর্জেন্টিনার কর্মকর্তারা। এর আগের দিন ঢাকায় আসবেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো।
দূতাবাস চালুর পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে নয়াদিল্লিতে আর্জেন্টিনা দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত ফ্রাঙ্কো সেনিলিয়ানির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সোমবার ঢাকায় আসে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো তিন দিনের সফরকালে দূতাবাস উদ্বোধনের ঘোষণার পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, 'আর্জেন্টিনার সঙ্গে আমাদের অনেক ভালো সম্পর্ক। এর আগে দেশটির সঙ্গে আমরা কয়েকটি বিষয় নিয়ে কাজও করেছি কিন্তু তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে আমাদের একটা প্ল্যান আছে আমরা তাদের দেশে একটা মিশন খুলব। ইতোমধ্যে আমরা ব্রাজিলেও মিশন খুলেছি।'
তিনি জানান, আর্জেন্টিনার পরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার গত বছরে সাক্ষাৎ হয়। তখন তিনি বাংলাদেশে মিশন খোলার আগ্রহের কথা জানান।
গত বছরের ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা জয়ের পর অভিনন্দন জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজকে চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভিনন্দনবার্তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো। চিঠিতে আলবার্তো বলেন, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস স্থাপনের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণ ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির দৃঢ়বন্ধনে আবদ্ধ হবে।
ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালুর বিষয়টি মূলত সামনে আসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি টুইটকে কেন্দ্র করে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ওই টুইটে লেখেন, ঢাকায় ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বন্ধ হয়ে যাওয়া তার দেশের দূতাবাস পুনরায় চালুর বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের জোরালো সমর্থন দীর্ঘদিনের। তবে সদ্য সমাপ্ত কাতার বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনা দলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আবেগ বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ে। বিশেষ করে মেক্সিকোর বিপক্ষে মেসির গোলের পর উল্লাসরত বাংলাদেশি সমর্থকদের একটি ভিডিও ফিফার অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করার পর তা বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে। ভিডিওটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আর্জেন্টিনার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঘটনাটি ফলাও করে প্রচার করা হয়।
পরে আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের টুইটারে বলা হয়, ‘আমাদের দলকে সমর্থন করার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ! ওরা (বাংলাদেশিরা) আমাদের মতোই পাগল!’