‘তুই বিএনপি-জামায়াত করিস, আমাদের সঙ্গে চল।’—এই বলে চড়-থাপ্পড় দিয়ে সড়ক থেকে আনিসুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যান ছাত্রলীগের চার-পাঁচজন নেতা-কর্মী। পরে তাঁকে একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতরে নিয়ে গিয়ে হাতে থাকা ব্যাগ থেকে ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন তাঁরা। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অপহরণের ঘটনাটি ঘটে ১ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। ঘটনাস্থল চকবাজারের চক মোগলটুলীর ৯২ নম্বর বশির ম্যানশনের সামনে। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি মামলা করেছেন আবদুল সুবহান নামে এক ব্যবসায়ী। কারণ ছিনতাইয়ের শিকার আনিসুল তাঁর দোকানেরই কর্মচারী।
মামলায় আবদুল সুবহান অভিযোগ করেন, তিনি ইমিটেশনের ব্যবসা করেন। চকবাজারের হাজী সেলিম টাওয়ারে ‘সুবহান স্টোর’ নামে একটি দোকান রয়েছে তাঁর। ১ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে দোকানের কর্মচারী আনিসুল ইসলামকে ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে তা পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ইসলামী ব্যাংক শাখায় জমা দিতে বলেন। আনিসুল ৯২ নম্বর বশির ম্যানশনের সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় তিন-চারজন অজ্ঞাত লোক তাঁর গতিরোধ করেন এবং আনিসুলকে বলতে থাকেন, ‘তুই বিএনপি-জামাত করিস, আমাদের সঙ্গে চল’। এই বলে তাঁরা কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মেরে টেনেহিঁচড়ে আনিসুলকে রিকশায় তুলে পোস্তার দিকে নিয়ে যান। পথচারীরা তাঁদের কাছে কারণ জানতে চাইলে ওই অপহরণকারীরা জানান, তাঁকে পুলিশে দেওয়া হবে। এরপর তাঁকে অজ্ঞাত এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে তাঁর হাতে থাকা ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার ব্যাগ ও একটি রেডমি নোট-১১ মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরা। বেলা ১টার দিকে রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আনিসুল দোকানে এসে ঘটনার বিস্তারিত জানান।
ঘটনার পর ব্যবসায়ী আবদুল সুবহান বিষয়টি তাঁদের ব্যবসায়ী সমিতিকে জানান। এরপর তিনি থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ এসে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। পুলিশ অভিযান শুরু করে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের তিন সদস্যকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন চকবাজার থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. শেখর আহম্মেদ শুভ, ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজ হোসেন এবং ছাত্রলীগ সদস্য সায়েম। জড়িত আরও কয়েকজনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মো. জাফর হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
তাঁদের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকা এবং অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চকবাজার থানার পুলিশের একটি সূত্র বলছে, গ্রেফতার ছাত্রলীগের নেতারা সবাই চকবাজার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শাওন হোসেনের অনুসারী। এই ঘটনায় গ্রেফতার তিনজনসহ সভাপতি শাওন, যুগ্ম সম্পাদক রাব্বিসহ পাঁচজনকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, এই ঘটনায় জড়িত ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ইতিমধ্যে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।