দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর)। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ নভেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে দেশের প্রথম পাবলিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর সরকারিভাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এম. এ. বারীকে সভাপতি করে সাত সদস্যবিশিষ্ট ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি’ গঠন করা হয়। একই বছর ৩১ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল মক্কায় ওআইসি’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী শিক্ষা সম্মেলনে এশিয়ার তিনটি মুসলমান রাষ্ট্রে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত হয়।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে জিয়াউর রহমান সরকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ড. এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে প্রকল্প পরিচালক নিযুক্ত করেন। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ নভেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ইসলামী শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৮০(৩৭) জাতীয় সংসদে পাস হয়। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি প্রকল্প পরিচালক ড. এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেয়া হয়।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আবাসিক ছাত্রহলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাইয়ের এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে দুটি অনুষদে চারটি বিভাগে মোট তিনশত ছাত্র ভর্তি করা হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। তখন শিক্ষক সংখ্যা ছিলো আট জন। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারির এক আদেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর মূল ক্যাম্পাসে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের উদ্বোধন করা হয়।
জুন ২০২৪ পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টির ৮টি অনুষদের ৩৬টি বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৭৮, যাদের মধ্যে ছাত্র ৯২২৬ এবং ছাত্রী ৫৪৫২ জন। ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৬০০ (প্রায়)। বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ জন। বর্তমানে ৪০৬ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ৪৮৮ জন কর্মকর্তা, ১০২ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৪৯ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৬২৪ জনকে পিএইচ.ডি এবং ৭৮৮ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি প্রদান করেছে। বর্তমানে ১৬৪ জন পিএইচ.ডি এবং ৪৭ জন এম.ফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন।
শিক্ষা ও গবেষণাক্ষেত্রে সহযোগিতা বিনিময়ের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সম্প্রতি চীনের সাউথইস্ট ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যেখানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এবং চীনের সাউথইস্ট ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ড. ওয়াং ওয়াইবিন স্বাক্ষর করেন। এছাড়াও গত ২৪ অক্টোবর বিআইআইটি অডিটোরিয়ামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক থট (আইআইআইটি)-এর সঙ্গে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহ যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে যথাসময়ে সার্টিফিকেট, মার্কসশীট, ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহ করতে পারছেন। আশা করা হচ্ছে, অফিসটি নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হলে সেবার মান আরও বাড়বে।
এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের , দ্বিতীয় সমাবর্তন ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের তৃতীয় সমাবর্তন ২৮ মার্চ ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ ৪র্থ সমাবর্তন ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
ক্রীড়াক্ষেত্রেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। এ্যাথলেটিক্স-এ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সাত বার এবং ছাত্রীরা আট বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ফুটবলে তিন বার, হ্যান্ডবলে (ছাত্র) তিন বার, ভলিবল (ছাত্র)-এ ১৩ বার এবং বাস্কেটবলে চার বার চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়াও ব্যাডমিন্টনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ২০২৪ সালে এবং ছাত্রীরা ২০২৭ ও ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি অর্জন করে। এ বিশ্বব্দ্যিালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্রী তামান্না আক্তার সাত বার জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার হাডেলস ইভেন্টে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বই রয়েছে এক লক্ষ ২৬ হাজার ৭২টি। এছাড়াও জার্নাল, ম্যাগাজিন এবং নিউজ পেপার এর সংখ্যা ১৯ হাজার ৪ শত (প্রায়)। রিমোট এক্সেস এর মাধ্যমে অনলাইনে সাবস্ক্রাইবড ই-বুক এবং ই-জার্নাল পড়ার সুবিধা রয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে নিজস্ব গাড়ি রয়েছে ৪৬টি। এর মধ্যে ৫২ আসনের নন এসি বাস ১৩টি, দ্বিতল বাস ১টি, এসি বাস ১টি, ৩০ আসনের এসি কোস্টার ৭টি, নন-এসি মিনিবাস ৫টি, হায়েস এসি মাইক্রো ৫টি, জীপ ৭টি, কার ৩টি, পিক-আপ ২টি এবং অ্যাম্বুলেন্স ২টি। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ভাড়াকৃত ৯টি দ্বিতল বাসসহ মোট ৩২টি বাস-মিনিবাস রয়েছে।