রাশিয়ার সর্বশেষ চন্দ্রাভিযান ছিল ‘লুনার ২৪’। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে এটি চাঁদে অবতরণ করেছিল। ফেরার সময় চন্দ্রপৃষ্ঠের কিছু নমুনাও পৃথিবীতে নিয়ে আসে এটি।
প্রায় অর্ধ শতাব্দি পর চাঁদে নিজেদের প্রথম অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। এর মাধ্যমে ২১ শতকে চন্দ্রপৃষ্ঠে অভিযান চালাতে যাওয়া সাম্প্রতিকতম দেশ হতে যাচ্ছে তারা।
শুক্রবারে ‘লুনা ২৫’ নামের মিশনটি শুরু হবে রাশিয়ার পূর্বাংশে অবস্থিত ‘ভস্তচনি কসমোড্রোম’ স্পেসপোর্ট থেকে। এর কয়েক সপ্তাহ আগেই বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ‘সাতিশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার’ থেকে ‘চন্দ্রযান ৩’ নামের রকেট উৎক্ষেপণ করেছে ভারত।
এই দুটি মিশনেরই লক্ষ্য, ২৩ অগাস্ট নাগাদ অথবা এর আগে বা পরে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা। তবে চন্দ্রপৃষ্ঠে কোন দেশ আগে অবতরণ করবে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
রাশিয়ার সর্বশেষ চন্দ্রাভিযান ছিল ‘লুনার ২৪’। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে এটি চাঁদে অবতরণ করেছিল। ফেরার সময় চন্দ্রপৃষ্ঠের কিছু নমুনাও পৃথিবীতে নিয়ে আসে এটি।
এর পর বেশ কয়েক দশক ধরে চন্দ্রপৃষ্ঠে অনুসন্ধান চালানোর উদ্যোগ নেয়নি বিশ্বের কোনো দেশই। তবে, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রপৃষ্ঠে ‘চ্যাং’ই ৩ মিশন’ পরিচালনা করে ওই দীর্ঘ বিরতি ভেঙেছে চীন।
পরবর্তীতে ‘চ্যাং’ই ৪ মিশনের’ মাধ্যমে প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দূরবর্তী প্রান্তে অবতরণের পর ‘চ্যাং’ই ৫ মিশনের’ মাধ্যমে রাশিয়ার পর চাঁদ থেকে পৃথিবীতে নমুনা পাঠানো প্রথম দেশ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে চীন।
এর পাশাপাশি, অন্যান্য দেশ চাঁদে অভিযান চালালেও সফল হতে পারেনি। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে ইসরায়েল নিজস্ব চন্দ্রযান ‘বিয়ারশিট’ উৎক্ষেপণ করলেও সেটি বিস্ফোরিত হয়। আর এতে থাকা ছোট প্রাণিগুলো চন্দ্রপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে।
২০১৯খ্রিস্টাব্দেএকইভাবে বিস্ফোরিত হয় ভারতের চাঁদে অবতরণের সর্বশেষ প্রচেষ্টা ‘চন্দ্রযান ২’। তবে, এর কারণ ছিল সফটওয়্যার জটিলতা। আর এই বছরের শুরুতে ‘হাকুতো-আর’ নামে নিজস্ব চন্দ্রাভিযানের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল এক জাপানি কোম্পানি। তবে, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সেটিও ধ্বংস হয়ে যায়।
এই চলমান ব্যর্থতার মিছিল ভাঙার দৌড়ে প্রথম হওয়ার জন্য লড়ছে ভারত ও রাশিয়া। দুটি দেশই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যাওয়ার লক্ষ্যস্থির করেছে, যা এখন পর্যন্ত কোনো মিশনে সম্ভব হয়নি। পরের দশকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যস্থির করা নাসার আর্টেমিস প্রকল্প’সহ আসন্ন বেশ কয়েকটি চন্দ্রাভিযানে গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এলাকাটি।
বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে থাকা বিশাল বরফ ও খনিজ জীবন ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে খাওয়ার পানি ও অন্যান্য এমন উপাদান, যেগুলো চাঁদে মানুষের অনুসন্ধান চালানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
চাঁদে বরফ ও অন্যান্য এমন উপাদান, যা ভবিষ্যতের অভিযানে কাজে লাগতে পারে, সেগুলো খোঁজার উদ্দেশ্যে লুনার ২৫ নভোযানে একটি রোবটিক বাহু ও হাতল যুক্ত করা হয়েছে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে প্রায় বছরখানেক কার্যক্রম চালাবে নভোযানটি।
অন্যদিকে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ৫৭ পাউন্ড ওজনের ‘প্রজ্ঞান’ নামের রোভার যান অবতরণের লক্ষ্যস্থির করেছে চন্দ্রযান ৩। তবে, এটি কেবল কয়েক সপ্তাহ কার্যক্রম পরিচালনা করবে কারণ চাঁদের হিমশীতল রাতে এটা বেশিদিন টিকতে পারবে না।
এই মাসের শেষ নাগাদ অভিযানে পাঠানো নভোযানগুলো পরপর অবতরণের সম্ভাবনা থাকলেও সেগুলোর অবস্থান একে অপরের চেয়ে অনেক দূরেই থাকবে।
“তাদের একে অপরের কার্যক্রমে বাধা হওয়ার বা সংঘর্ষের কোনো ঝুঁকি নেই।” --বলেছে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা ‘রসকসমস’।
“চাঁদে সবার জন্যই যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।