৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি খুব তারাতারি প্রকাশের কথা ভাবছে পিএসসি। প্রিলিমিনারিতে ভালো করতে চাইলে প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। বিসিএস প্রিলিতে পাস করা একদম সহজ নয়, আবার খুব কঠিনও নয়। কিন্তু বিসিএস প্রস্তুতি যদি সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী নেওয়া যায় তবে হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেকে এগিয়ে রাখা সম্ভব।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হচ্ছে শুধু লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রার্থীর প্রাথমিক যোগ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষা। ক্যাডার নির্ধারণে প্রিলির নম্বর যোগ হয় না। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর যোগ করে ক্যাডার নির্ধারণ করা হয়। প্রিলিতে ন্যূনতম কত নম্বর পেলে পাস (কাট মার্কস) ধরা হবে, এটি পরীক্ষার পর পিএসসি কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। বিসিএস প্রিলি পরীক্ষা হয় ২০০ নম্বরে। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই পরীক্ষা হয় এমসিকিউ পদ্ধতিতে। প্রতিটি এমসিকিউ উত্তর করতে প্রার্থীরা সময় পাবেন ৩৬ সেকেন্ড করে। প্রশ্ন হবে ১০টি বিষয়ে। প্রতিটি বিষয়ে নম্বরের বণ্টন আলাদা। প্রিলিতে নেগেটিভ মার্কিং ৫০% অর্থাৎ প্রতি ২টি এমসিকিউ ভুল দাগালে ১ নম্বর কেটে নেওয়া হবে। বিসিএস প্রিলিতে পাসের জন্য পরিকল্পনার পাশাপাশি কিছু টেকনিক অবলম্বন করে এগোলে এই ধাপে পাস করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
বিসিএস প্রস্তুতি নিতে বিসিএস সিলেবাস সম্পর্কে ভালো ধারনা নিতে হয়। বিসিএস পরীক্ষায় ১০টি বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে। এই ১০ বিষয় এর সিলেবাস ও মানবন্টন জেনে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিসিএস প্রিলিমিনারি সিলেবাস এনালাইসিস করে নিজের স্ট্রং ও উইক জোন সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যায়। তারপর সেই ভিত্তিতে প্রস্ততি নিতে হয়। বিসিএস সিলেবাস ও মানবণ্টন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করতে পারেন।
বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি নিতে সিলেবাস দেখে বিষয়ভিত্তিক একটা স্টাডি প্ল্যান রেডি করে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিলে পরিকল্পিত ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবেন। প্রস্তুতির সাথে সাথে পরীক্ষা দিতে পারলে আপনার প্রস্তুতিকে পরিপূর্ণ করতে সহায়তা করবে। ৪৭তম বিসিএস যাদের টার্গেট, তারা এখন থেকে প্ল্যান রেডি করে প্রস্তুতি শুরু করুন।
বিসিএস প্রশ্ন সম্পর্কে ধারনা নিতে প্রথমেই বিগত বছরের বিসিএস প্রশ্নের প্রশ্নব্যাংক নিয়ে প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি শুরু করা যেতে পারে। বাজার থেকে যেকোনো ভালো মানের বিসিএস জব সলুশন বই নিয়ে নিন অথবা অনলাইনে অনেক অ্যাপ আছে যার মাধ্যমে আপনি বিসিএস প্রশ্ন সমাধান ব্যাখ্যা সহ পেয়ে যাবেন। যে টপিকগুলো থেকে প্রায়ই বিসিএস পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে, সেই টপিকগুলো মার্ক করে গুরুত্ব সহকারে পড়ে প্রস্তুতি নিতে পারবেন। ৩৫তম-৪৬তম বিসিএসের প্রশ্ন ব্যাখ্যা সহ পড়লে বিসিএসের সিলেবাস অনেকটাই আয়ত্তে চলে আসবে। এতে বিসিএস প্রিলি নিয়ে আপনার যে ভয় আছে, তা কেটে যাবে এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে।
বিগত খ্রিষ্টাব্দের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা থেকে যেহেতু অনেক প্রশ্ন রিপিট হয়, সেজন্য জব সল্যুশন পড়ুন। এখানে বিগত খ্রিষ্টাব্দের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার ব্যাখ্যাসহ সমাধান পাবেন। এ ক্ষেত্রে বাজার থেকে ভালো মানের একটি জব সল্যুশন কিনে ফলো করতে পারেন।
এরপর বাজার থেকে যেকোনো প্রিলির আলাদা বিষয়ের বই কিনে সিলেবাসের সাথে মিল রেখে টপিকগুলো পড়ে ফেলুন। গুরুত্বপূর্ণ টপিক বা অধ্যায়ের ওপর বেশি জোর দিন। বিশেষত যে টপিক বা অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতিবার প্রশ্ন আসছে, সেই টপিক বা অধ্যায়গুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়ুন।
এছাড়া যে কাজটি করবেন, ৪র্থ-১০ম শ্রেণির বোর্ড বইের ম্যাথগুলো শেষ করুন এবং ৯ম-১০ম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ বইটি ভালোভাবে পড়ুন। এ বই থেকে প্রিলির ‘ভূগোল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ অংশের হুবহু অনেক প্রশ্ন কমন আসে। সেই সঙ্গে বাংলা ব্যাকরণ বইটি রাখবেন। নিয়মিত দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ুন। যাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নেই বা পড়ার সুযোগ নেই, তারা মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ুন। পরীক্ষার আগমুহূর্তে সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি বই পড়তে পারেন। কেননা সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এখন সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান পড়লে, পরে আবার পড়া লাগতে পারে।
প্রতিটা বিষয় পড়ার পর নিয়মিত পরীক্ষা দেওয়ার অভ্যাস করুন। তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন, সে বিষয় ভালোভাবে শেষ করুন, বিষয়টিতে জোর দিন। বিসিএস প্রিলির যেকোনো ভালো সিরিজের বইগুলো পড়ুন এবং বিসিএস প্রিলিমিনারি অ্যানালাইসিস বইটি ভালোভাবে শেষ করুন।
বিসিএস স্বপ্ন পূরণে দরকার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং পরিশ্রমী মনোভাব। তাই টেকনিক অনুসরণ করে ৪৭ তম বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করে নিন। বিসিএস হলো মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের পরীক্ষা, যার মনোবল ও আত্মবিশ্বাস যত বেশি সে তত দ্রুতই সফল হবে। বিসিএস প্রত্যাশীদের সবার জন্য রইল শুভকামনা।