সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ভূইয়াগাঁতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চারটি পদে নিয়োগের জন্য মোটা টাকার ঘুষ নিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। তার ঘুষ গ্রহণের দৃশ্য গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে। তবে ঘুষ নয় বরং সম্মানী হিসেবে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন তরিকুল ইসলাম।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার ভূইয়াগাঁতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে এই টাকা লেনদেনের ঘটনা ঘটে। শিক্ষা কর্মকর্তা ৫০ হাজার টাকার সঙ্গে গাড়ি ভাড়া হিসেবে আরও ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, শনিবার উপজেলার ভূইয়াগাঁতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্য পদ পূরনের জন্য নিরাপত্তাকর্মী, নৈশ প্রহরী, অফিস সহায়ক ও পরিছন্নতা কর্মী পদে চারজনকে নিয়োগ দেয়া হয়। টাকার বিনিময়ে চারজনকে নিয়োগ দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এতে সহযোগিতা করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম।
প্রতিষ্ঠানে চারটি পদের বিপরীতে মোট কতজন আবেদন করেছেন, যাচাই-বাছাইয়ে কতজন টিকেছেন এবং তাদেরকে কবে প্রবেশপথ পৌঁছানো হয়েছে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলী। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে কাদের নিয়োগ দেয়া হলো সেটিও টাঙানো হয়নি নোটিশ বোর্ডে।
ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গিয়ে টেবিলের আড়ালে তার হাতে একটি টাকার বান্ডিল তুলে দেন। শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা নিয়ে তার কোটের ডান পকেটে রাখেন। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক শিক্ষা কর্মকর্তার হাতে আরও কিছু টাকা দিলে শিক্ষা কর্মকর্তা টাকাটা গুনে তার কোটের বাম পকেটে রাখেন। এ সময় পাশেই বসা ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিজির প্রতিনিধির পাঠানো মনোনীত কর্মকর্তা।
এ সময় ডিজির প্রতিনিধির মনোনীত কর্মকর্তাকেও টাকা দিতে দেখা যায় প্রধান শিক্ষককে।
জানতে চাইলে টাকা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ভূইয়াগাঁতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলী বলেন, আমি তাকে কোনো টাকা দিইনি। কিন্তু টাকা দেয়ার ভিডিও আছে বললে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
তবে মো. তরিকুল ইসলাম টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি ৫০ হাজার টাকা নিয়েছি আমার সম্মানী হিসেবে। এটা ঘুষ নয়। আর ৩ হাজার টাকা নিয়েছি গাড়ি ভাড়া হিসেবে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ভূইয়াগাঁতী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি অনিল কুমারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ডিজির প্রতিনিধি কাজিপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিমের মুঠোফোনে কল দিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় সেখানে যেতে পারিনি। আমার প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষককে পাঠিয়েছিলাম। তবে নিয়োগে এমন টাকা লেনদেন হওয়ার কথা নয়।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সবসময়ই স্বচ্ছ হবে এটাই প্রত্যাশা, কারণ এখানে মানুষের জীবিকার ব্যাপার থাকে। যেহেতু মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন তিনি সম্মানী নিয়েছেন সে ক্ষেত্রে তাদের কত টাকা সম্মানী নেয়ার নিয়ম আছে সেটা আমি জানি না। তবে যদি এখানে অনিয়ম দুর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে আশা করছি শিক্ষা বিভাগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিম উল্লাহ বলেন, এত টাকা কারো অনারিয়াম (সম্মানী) হতে পারে না। আগামীকাল অফিসে গিয়ে আমি বিষয়টি জানার চেষ্টা করব।