দেশের ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ হাজার ৬৯০ কোটি ৪ লাখ টাকার পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৯ হাজার ১৫৫ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিজস্ব আয়সহ ৮৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বাজেট অনুমোদন করা হয়। ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সভাপতিত্বে ১৬৭তম পূর্ণ কমিশন সভায় এ বাজেট অনুমোদিত হয়। বুধবার (১২ জুন) ইউজিসিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কার্যপত্র তুলে ধরেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান। সভায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের বিস্তারিত দিক তুলে ধরেন ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক মো. রেজাউল করিম হাওলাদার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল বাজেটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারের অনুদান হিসেবে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংস্থান করা হয়। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে অর্জিত রাজস্ব আয় ধরা হয় ১ হাজার ২৭২ কোটি ৫৩ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল বাজেটে ৩১টি প্রকল্পের অনুকূলে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আর বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত বাজেটে ৯ হাজার ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব বাজেট পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮০৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং গবেষণা খাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সবচেয়ে বেশি ২০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসি’র জন্য ১২ হাজার ২৬২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন প্রস্তাব করা হয়েছিলো। গতকালের পূর্ণ কমিশন সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য গবেষণা খাতে ১৮৮ কোটি ৬৫ টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে গবেষণা খাতে ১৪৫.৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়।
এছাড়া ইউজিসি থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বৈদেশিক পিএইচডি স্কলারশিপে ১০ কোটি টাকাসহ গবেষণা খাতে ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়।
বাজেট বরাদ্দ বিষয়ে প্রফেসর আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, অধিকতর উন্নত গবেষণার জন্য অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা, উদ্ভাবনী গবেষণার সক্ষমতাকে শক্তিশালী করা, উদীয়মান প্রযুক্তি ও শিক্ষার সব শাখায় ফলিত গবেষণাকে উৎসাহ প্রদান, সুশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং সবক্ষেত্রে আইসিটি প্রয়োগের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবছর বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রফেসর আলমগীর বলেন, এবারের বাজেটে সরকারি অনুদান বৃদ্ধির হার ৫.৫৭ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বেড়েছে ৮.৪০ শতাংশ এবং গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯.৮০ শতাংশ।
প্রফেসর আলমগীর বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সরকার ও ইউজিসির আর্থিক নীতিমালা অনুসরণ করে বাজেট বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে তিনি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং নিজস্ব আয় বৃদ্বির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, অধ্যাপক ড. হাসিনা খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আলম খান, পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো’র সদস্য (সচিব) রেহানা পারভীনসহ পূর্ণ কমিশনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি ও আপগ্রেডেশন বিষয়ক নীতিমালা অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া কোলাবরেটিভ রিসার্চ গ্রান্টস নীতিমালা ২০২৩ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল ২০২৪ অনুমোদন করা হয়।