দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : নওগাঁর সাপাহারের সরফতুল্লাহ ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীর আরবি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় বসার ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এ ঘটনা সরেজমিনে তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মো. সিদ্দিকুর রহমান।
মঙ্গলবার ওই কেন্দ্রে ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্ত হওয়ার পর রাতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি গঠনের আদেশ দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে এসেছে।
জানা গেছে, তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বোর্ডের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরীকে। আর সদস্য হিসেবে আছেন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম ও উপ-মাদরাসা পরিদর্শক মো. আকরাম হোসেন।
এদিকে মঙ্গলবার আরবি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা চলাকালে নওগাঁর সাপাহারের সরফতুল্লাহ ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থী আটক হওয়ার পর আসল পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার ওই কেন্দ্রে ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্ত হওয়ার পর প্রথমে তাদের আটক করা হয়। তবে, আটককৃতদের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওই কেন্দ্রে ভুয়া পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষা দেয়ানো আটটি মাদরাসা প্রধানের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন সাপাহারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন।
ভুয়া পরীক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয়ানো মাদরাসাগুলো হলো, সদ্য এমপিওভুক্ত সাপাহারের সিমুলডাঙা দাখিল মাদরাসা, মানিকুড়া দাখিল মাদরাসা, বলদিয়াঘাট দাখিল মাদরাসা, নন এমপিও পলাশডাঙা দাখিল মাদরাসা, দেওপাড়া দাখিল মাদরাসা, আলাদিপুর দাখিল মাদরাসা, তুলসিপাড়া দাখিল মাদরাসা, আন্ধারদীঘি দাখিল মাদরাসা। এরমধ্যে সদ্য এমপিওভুক্ত ৩টি এবং ননএমপিও মাদরাসা ৫টি।
কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে আরবি দ্বিতীয় পত্র বিষয়ে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কিছু ভুয়া পরীক্ষার্থী এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যায়। কক্ষ পরিদর্শকরা খাতা স্বাক্ষর করার সময় বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে কেন্দ্রসচিবকে জানান। সেই তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রসচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে সঙ্গে সঙ্গে তিনি কেন্দ্রে অভিযান চালান। এসময় শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, ছবিসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু যাচাই-বাছাই করেন। যাচাই-বাছাই শেষে এই ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে শনাক্ত করেন।
জানা গেছে, এই কেন্দ্রে ৪০টি মাদরাসার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ৮৯৮ জন পরীক্ষার্থী এবারে পরীক্ষা দিচ্ছেন। এরমধ্যে শিমুলডাঙা দাখিল মাদরাসা থেকে ১১ জন, পলাশডাঙা দাখিল মাদরাসা থেকে ৮ জন, দেওপাড়া শিংপাড়া দাখিল মাদরাসা থেকে ৩ জন, আলাদিপুর দাখিল মাদরাসা থেকে ১ জন, তুলশিপাড়া দাখিল মাদরাসা থেকে ১৪ জন, বলদিয়াঘাট দাখিল মাদরাসা থেকে ২ জন, আন্ধারদীঘি দাখিল মাদরাসা থেকে ১৭ জন, মানিকুড়া দাখিল মাদরাসা থেকে ৩ জন ভুয়া পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে এসে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দিলেও প্রকৃত পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
কেন্দ্র সচিব মো. মোসাদ্দেক হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি গোপন সূত্রে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানাই। এরপর ইউএনও স্যার ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যার এসে কক্ষ পরিদর্শকদের সহায়তায় এই ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীদের শনাক্ত করেন। এরপর তাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং ওই ৮টি মাদরাসার প্রধানের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সেই মামলা দায়ের করার বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, যাচাইয়ের পর ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থী পাওয়ায় তাদের কক্ষ পরিদর্শক বহিষ্কার করেছেন এবং ওই ৮টি প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে কেন্দ্রসচিব নিয়মিত মামলা দায়ের করবেন।