ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের তুলনা ইতিহাসে আর কোনো ভাষণে নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। তিরি বলেছেন, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাৎক্ষণিক শব্দ চয়নের মধ্যদিয়ে জাতির পিতা যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেটি ছিল অসাধারণ। সাধারণ মানুষকে জাগাতে ভাষণে তিনি যে শব্দমালা প্রয়োগ করেছিলেন এজন্য এটি অসাধারণ। এই মহা ভাষণের মধ্যদিয়ে তিনি বাঙালিকে হাজার বছরের বঞ্চনা, অপমান ও পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করতে ডাক দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ : গণমানুষের অনন্য চেতনার উদ্ভাসন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমরা ইতিহাসের যেসব নায়ক ও রাষ্ট্রনায়কদের কথা জানি তারা যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা কোনো জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে ছিল না। সেসময় তারা হাজার বছরের শৃঙ্খল ভেঙে কোন একটা জাতিকে পরাধীনতার বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার যুদ্ধের মুক্তির সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান দেননি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি যেন হঠাৎ করে তার হাজার বছরের জড়তা,দৈন্য, গ্লানি এগুলো সবদিক অতিক্রম করে মহাচেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আজন্ম সাধনা স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্য সর্বাগ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত দীক্ষা পায়।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধুই প্রথম সাত কোটি বাঙালিকে ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, নির্বিষেশে এক মহাঐক্যে জাগ্রত করেছিলেন এবং এই মহাভাষণটি দিয়েছিলেন। এই মহাভাষণটির প্রেক্ষাপট তিনি রচনা করেছিলেন। ১৯৪৮-১৯৬৮ দীর্ঘ দুই দশকে তিনি অসংখ্যবার বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় চেতনাকে জাগ্রত করার জন্য জেলে গেছেন। ৭ই মার্চের ভাষণটি ছিল তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পরিণত ফুল, পরিণত ফল, পরিণত সিদ্ধান্ত। এই ভাষণটি তিনি শুরু করেছিলেন পাকিস্তানের শাসকচক্রের হাতে বাঙালির ২৩ বছরের মহাবঞ্চনার ইতিহাস উপস্থাপনের মধ্যদিয়ে। ২৩ বছরের অত্যাচারের ইতিহাস, অধিকার হরণের ইতিহাস, বঞ্চনার ইতিহাস সবই ভাষণে তিনি তুলে এনেছিলেন।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বঙ্গবন্ধু-নীল দলের সভাপতি অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রিয়াদ হাসান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রামিম আল করিম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবসহ অন্যান্যরা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক রাগীব রহমান।
এর আগে দিবসের প্রথম প্রহরে দিবাগত ১২টা থেকে ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য পাদদেশে ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণ প্রচার করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর। এসময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিশ^বিদ্যালয়ের ডিন, হল প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু নীল দল, কর্মকর্তা পরিষদ, কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন।