শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি আবাসিক হলের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে বছর খানেক আগে। এরই মধ্যে কেনা হয়েছে কোটি টাকার আসবাবপত্র। তবে এখনো হল দুটিতে সিট বরাদ্দ পায়নি শিক্ষার্থীরা। কবে ও কীভাবে সিট দেয়া হবে, সেটিও চূড়ান্ত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অথচ দীর্ঘদিন আবাসন সংকটে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শেকৃবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদ শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুন হল নামে দুটি হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর করোনার কারণে দেরি হলেও ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছাত্রীদের এবং ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ছাত্রদের হল দুটির মূল কাজ শেষ হয় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে। আনুষ্ঠানিকভাবে সব কাজ শেষ হয় চলতি বছরের মার্চ মাসে। এরপর প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও হলগুলো চালু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাতে রয়েছে জনবলের চরম ঘাটতি। এতে হলের সম্পূর্ণ কাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার পরও নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে এখনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিনিময় কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে নিজের অর্থ ব্যয়ে হল দেখভাল করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে শেখ লুৎফর রহমান হল থেকে ৬ লাখ টাকার নির্মাণ সামগ্রী চুরির ঘটনাও ঘটেছে। যদিও লুৎফর রহমান হলে গিয়ে ভেতরে তালা ঝুলতে দেখা যায়।
লুৎফর রহমান হলে রুম রয়েছে ২৫০টি। এছাড়াও রয়েছে রান্নাঘর, শৌচাগার, ক্যান্টিন ও ডাইনিং, টিভিকক্ষ, নামাজের স্থান। সায়েরা খাতুন হলে রুম সংখ্যা ২৩৮টি। দুই হলেই গণরুমসহ জায়গা হবে মোট দুই হাজার শিক্ষার্থীর।
এদিকে হল চালুর নাম না থাকলেও ১৪ মাস আগে বিনা পারিশ্রমিকে হল প্রভোস্ট দিয়ে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. উদয় কুমার মহন্তকে শেখ লুৎফর রহমান হলে ও কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলামকে শেখ সায়েরা খাতুন হলের প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হয়।
এরই মধ্যে শেখ লুৎফর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. উদয় কুমার মহন্ত ৭ মাস ধরে উচ্চশিক্ষার জন্য অবস্থান করছেন বিদেশে। সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন, তার কারণেই হল খুলতে দেরি হচ্ছে।
হলের কাজ শেষ হওয়ার আগেই হল প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে কেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুল হক কাজল বলেন, হলের কাজগুলো বুঝে নেওয়ার জন্য এবং খোঁজখবর নেওয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে তারা নামমাত্র প্রভোস্ট। তাদের প্রভোস্ট পদের বেতন দেয়া হয় না।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রদের জন্য তিনটি এবং ছাত্রীদের জন্য দুটি হল চালু আছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতভাগ আবাসনের কথা বলা হলেও বিভিন্ন কারণে রয়েছে সিট সংকট। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জায়গা দিতে না পারায় দীর্ঘদিন ধরে থাকতে হচ্ছে গণরুমে। নতুন হল হওয়ার পরও তা চালু হয়নি। এ কারণে সিট না পেয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল হলের তৃতীয় বর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, করোনাকাল বাদ দিলেও আমরা এক বছরের বেশি সময় ধরে নজরুল হলের প্রথম গণরুমে (১১৮) ছিলাম। যেখানে ৫০-৭০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে থাকতে হতো। করোনার পর ছয় মাসের বেশি দ্বিতীয় গণরুমে (১১৯) প্রায় ৩০-৪০ জন ছিলাম। এখন আমাদের নির্দিষ্ট রুমে (৪ জন) সিট পাওয়ার কথা থাকলেও ৪ জনের রুমে ৬-১২ জন থাকছি। আমাদের জুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখনো গণরুমে, এরই মধ্যে নতুন আরেক ব্যাচের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। নবীন শিক্ষার্থীদের নতুন হলে সংযুক্তি না দেয়ায় অন্য হলগুলোতে সিট সংকট তীব্র হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী বলেন, গণরুমগুলোর অবস্থা সবার জানা। ডেঙ্গুর মৌসুমে ডেঙ্গু, ভাইরাল জ্বরের সময় গণহারে জ্বর, এমনকি বিভিন্ন সিজনাল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম টার্গেট গণরুমের শিক্ষার্থীরা। আমরা এখনো গণরুমে আছি। এমনিতেই সিট সংকট, আমরা ভেবে রেখেছিলাম নবীনদের নতুন হল সংযুক্তি দেয়া হবে। এখন দেখছি আশার গুড়েবালি।
হল চালু না করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুন আবাসিক হলের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় আমরা এ বছর শিক্ষার্থীদের হলে তুলতে পারিনি। লোকবল নিয়োগ ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা হলের কাজ শুরুর সময়ের অরগানোগ্রামে ছিল না। আগের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ভুলের কারণে আমাদের এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে আমরা নতুন অরগানোগ্রামে লোকবল নিয়োগের বিষয় সংযুক্ত করেছি। আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবো।
একই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুল হক বলেন, হলগুলোর কাজ শুরুর সময় অরগানোগ্রামে লোকবলের বিষয় উল্লেখ না থাকা এবং নিয়োগজনিত সমস্যার জন্য শিক্ষার্থীদের তুলতে পারছি না। বিকল্প পরিকল্পনা করছি আমরা। ডিসেম্বরে টিএসসিসহ আবাসিক হল দুটি উদ্বোধন করে যদি অন্য সেক্টর থেকে কিছু সংখ্যক লোক এনে চালু করা যায়, আমরা তাই করবো। আমরা শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে দ্রুত পরিকল্পনা করছি।