দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : চিন্তা ছাড়া শিক্ষা অর্থহীন, আর শিক্ষা ছাড়া চিন্তা বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সহধর্মিনী ড. রেবেকা সুলতানা। ২২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব চিন্তা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ এসোসিয়েশন আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর বেইলি রোডের গাইড হাউস অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে গার্ল গাইডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নেতিবাচকতা ও কুপম-কতাকে পরিহার করে মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান ড. রেবেকা সুলতানা। তিনি বলেন, নিজের, পরিবারের, সমাজের এবং সর্বোপরি মানুষের কল্যাণে ভালো চিন্তা করুন এবং ভালো কাজ করুন।
বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্-এর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন পেশায় নারীরা এগিয়ে গেলেও তাতে আত্ম-তৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই।
তিনি আরো বলেন, মনে রাখতে হবে চিন্তা ছাড়া শিক্ষা অর্থহীন, আর শিক্ষা ছাড়া চিন্তা বিপজ্জনক।
ড. রেবেকা সবাইকে যেকোনো কাজ করার আগে সেটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়ারও অনুরোধ জানান নতুন প্রজন্মের প্রতি।
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ওয়ার্ল্ড গার্ল গাইডস্ এবং গার্ল স্কাউটের প্রতিষ্ঠাতা লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল এবং ওয়ার্ল্ড চিফ গাইড লেডি ওলাভ ব্যাডেন পাওয়েলের যৌথ জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছর ২২ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব চিন্তা দিবস’ উদযাপিত হয়ে আসছে। ‘আমাদের পৃথিবী, আমাদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ: পরিবেশ ও বৈশ্বিক দারিদ্র্য’-প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫৩টি দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে।
ড. রেবেকা আশা করেন, এই প্রতিপাদ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করেই গার্ল গাইডস নিজেদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ তৈরিতে সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা, দূষণমুক্ত টেকসই পৃথিবী বিনির্মাণে যথাসাধ্য অবদান রাখবেন।
রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী বলেন, আমাদের মুক্তি-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সব সময় সৎ চিন্তা করবেন, সৎ পথে চলবেন, তাহলে নিশ্চয়ই সফলতা পাবেন।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এখনো বহুদূরের পথ পাড়ি দিতে হবে।
ড. রেবেকা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবার, সমাজ ও জাতীয় স্তরে নেতৃত্বের আসনে নিজেদেরকে অধিষ্ঠিত করতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা স্বেচ্ছাসেবী এ নারী সংগঠনের গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতীয় সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে গার্ল গাইডসকে একটি পূর্ণাঙ্গ সংগঠনের মর্যাদা প্রদান করেন।
ড. রেবেকা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় সংসদের সাবেক উপনেতা মরহুম সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ এসোসিয়েশনের প্রথম জাতীয় কমিশনারের দায়িত্ব প্রদান করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদাধিকার বলে এই এসোসিয়েশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি গাইডিং কার্যক্রম সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন এবং ওয়াকিবহাল এবং আশা করেন যে, গার্ল গাইডস এর মাধ্যমে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন কার্যক্রম আরো এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একজন দীক্ষিত গাইড উল্লেখ করে ড. সুলতানা বলেন, তাঁর নেতৃত্বে সরকার নারীর উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন।
নিজেকে স্কুল জীবনে গাইড সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে সমাজকল্যাণ, সমাজ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব বিকাশের যে অনুপম ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে তা অনুসরণ করে বিশ্বব্যাপী ১০ মিলিয়ন গাইড সদস্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মেয়েদের সৃজনশীল ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ এসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার কাজী জেবুন্নেছা বেগম। বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা জুয়েনা আজিজ, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান এবং ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব গার্ল গাইডস অ্যান্ড গার্ল স্কাউটস-এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সভাপতি চেম্পাকা এমালিন বিন্তি পাহামিন বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী অনুষ্ঠানে একটি কেক কাটেন এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।