স্থানীয় এমপির নির্দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে বরখাস্ত করায় নাটোর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. গোলাম নবীকে ভৎসনা করেছেন হাইকোর্ট। তাকে উদ্দেশ্যে করে আদালত বলেছেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনগণের সেবক। সরকারি অফিসার হিসেবে রাষ্ট্রের কাজ করুন। এমপির কথায় বেশি লাফালাফি করবেন না।’
বুধবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
শুনানির এক পর্যায়ে জেলা শিক্ষা অফিসারকে ডায়াসের সামনে ডাকেন আদালত। এ সময় আদালতকে জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার কারণে শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়নি। এমপির বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ায় সহকারী শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তখন হাইকোর্ট বলেন, এমপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে বরখাস্ত করতে হবে, এটা কোথায় বলা আছে? আপনি কি এমপির চাকরি করেন? আপনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এবং জনগণের সেবক। এমপির কথায় বেশি লাফালাফি করবেন না। আইন অনুযায়ী চলেন। এমপির বিরুদ্ধে স্লোগান দিল, আর বরখাস্ত করে দিলেন। তদন্তেরও প্রয়োজন মনে করলেন না? কেন এমপির কথায় বরখাস্ত করলেন?
একপর্যায়ে আদালত তাকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি শিক্ষক থেকে শিক্ষা অফিসার হয়েছেন? জবাবে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, না। আমি প্রথমে টিইও ছিলাম। তখন হাইকোর্ট বলেন, আপনি শিক্ষক থেকে শিক্ষা অফিসার হলে একজন শিক্ষকের প্রতি এমনটা করতেন না। তখন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ভুল হয়েছে।
এরপর আদালত বলেন, আগে শিক্ষকের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। না হলে আপনাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এরপর সহকারী শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন আদালত। জেলা শিক্ষা অফিসারকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ৭ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদ। জেলা শিক্ষা অফিসারের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী মোস্তাক আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় দরিকাছিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে স্থানীয় এমপির নির্দেশে বরখাস্ত করা হয়। পরে এই ঘটনা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন আইনজীবী বশির আহমেদ। এ ঘটনায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে তলব করে ব্যাখ্যা দিতে বলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুল জারি করা হয়।