দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা সড়কের ফুটপাত দখল করে বসা খেজুর বিক্রেতার নাম মনু মিয়া। আর ক্রেতার নাম তালেবুল আলম। বিক্রেতার কাছে তালেবুলের প্রশ্ন ‘নিম্নমানের খেজুর কোনটা?’ বিক্রেতার দিকে তাকাতেই বোঝা গেল ক্রেতার এমন প্রশ্নে কতটা ক্ষুব্ধ ও অপমানিত বোধ করেছেন তিনি। ক্রেতার চোখে চোখ রেখেই বললেন, ‘খারাপ খেজুর বেচি না।’ ক্রেতাও নাছোড়বান্দা, ‘বললেন কে বেচে।’ অনেকটা বিরক্ত বিক্রেতা বললেন, ‘জানি না।’
মূলত তালেবের এমন প্রশ্ন আর বিক্রেতার বিরক্তি আমার মতো আরও কয়েকজন ‘উপভোগ’ করছিল।
তালেবুলকে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র মনে হলো না। মোবাইলের স্ক্রিনে মনু মিয়াকে দেখালেন, সরকার বলেছে নিম্নমানের খেজুর ১৫০ টাকায় কেনা যাবে। আমি ওই খেজুর খুঁজছি। আরেকটা আছে জাইদি খেজুর, সেটার দাম ১৭০ টাকা। এগুলো আপনি (বিক্রেতা) বেচেন না। এবার মনু মিয়া কিছুটা নরম হলেন। জানালেন এই দামে তার কাছে কোনো খেজুর নেই। একটা খেজুর দেখিয়ে বলছেন, ওটার কেজি ২২০ টাকা। আর জাইদি খেজুর আছে, সেটার কেজি ৩৩০ টাকা।
খেজুর আমার পছন্দ না। তাই খেজুরের দাম নিয়ে আমার কখনও কোনো আগ্রহ তেমন ছিল না। আমার পছন্দ জিলাপি। এর দাম কোথায় কেমন এই খবর আমি বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ি। জিলাপির নামেও এখন বেশ পরিবর্তন এসেছে। আমি সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা কেজি দামের জিলাপি খেয়েছি। জিলাপি প্রসঙ্গে থাক। আমার খেজুর প্রসঙ্গে আসি।
কাজের সূত্রে সরকারের খেজুরের দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে প্রথম রোজার দিনই জানিয়ে দেওয়া হয় বাজারে নিম্নমানের বা সাধারণ মানের যে খেজুর তার দাম হবে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা। আর জাইদি খেজুর যেটা সাধারণত ইরাক থেকে আসে তার দাম হবে ১৭০ টাকা থেকে ১৮৫ টাকা।
প্রজ্ঞাপনটা যখন পড়ছিলাম তখন এই নিম্নমানের শব্দটা আমার কাছেও খটকা লেগেছিল। তালেবুলের কাছেও এটাই হয়তো মনে হয়েছে। তালেবুলের বাড়ি নরসিংদীতে। হাজীপাড়ায় কোনো একটা কাজ করেন। সেটা অবশ্য বলতে চাইলেন না। জানালেন ফেসবুকে প্রজ্ঞাপনটা পেয়ে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছেন। হাজীপাড়া থেকে এই পর্যন্ত সড়কের পাশের অন্তত ১২ থেকে ১৫টা দোকানে এই নিম্নমানের খেজুর ও জাইদি খেজুর খুঁজেছি। কিন্তু কেউ নিম্নমানের খেজুর চেনেই না। বললাম এটা আসলে কমদামি খেজুর বুঝিয়েছে। তালেবুলের কথা হচ্ছে তাহলে নিম্নমানের লেখার দরকার কি? তাও বুঝলাম লিখেছে। কিন্তু এই দামে তো নিম্নমানের বা সাধারণ মানের কোনো খেজুর পাওয়া যাচ্ছে না। জাইদি খেজুর এটা সব দোকানেই আছে। ৩০০ টাকার নিচে কেউ বলছে না। তাহলে দাম বেঁধে দেওয়ার মানে কি?