গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বি ইউনিটে সারাদেশে প্রথম হয়েছেন কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থী সিজরাত জাহান প্রকৃতি। গুচ্ছভুক্ত ২২ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২- ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে অনার্স পর্যায়ের বি-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ ৯৩ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন।
প্রকৃতির বাড়ি কুড়িগ্রাম শহরের হিঙ্গনরায় হাটিরপাড় এলাকায়। তিনি ওই পাড়ার ব্যবসায়ী বাদল আহমেদ-ফিরোজা আহমেদ দম্পতির মেয়ে। তিন বোনের মধ্যে প্রকৃতি সবার ছোট।
প্রকৃতি কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ এবং ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে দৈনিক শিক্ষাডটকমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় প্রকৃতির। নিজের সাফল্যে আনন্দিত এ ছাত্রী বলেন, আমি প্রথম হওয়ার জন্য পড়িনি, পড়েছি ভালো কিছু করার জন্য। নিয়মিত এবং রুটিন করে পড়ে ভর্তি পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছি। এখন কি সাবজেক্ট পাবো সেটা জেনে পরবর্তী লক্ষ্য ঠিক করবো।
তিনি বলেন, কলেজের সব শিক্ষকের সহায়তা পেয়েছি। যখন কোনো বিষয় বুঝতে সমস্যা হতো তখন স্যারদের কাছে গেলে তারা সমাধান করে দিতেন।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে সিজরাত বলেন, ঢাকায় কোচিং করেছি। তবে সবকিছুর মূলে নিজের চেষ্টা ও নিয়মিত পড়াশোনা। আর নিজের বেসিক থাকতে হবে। বেসিক নলেজ ভালো থাকলে আর প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা পেলে সফলতা সহজ হয়।
তিনি বলেন, আমিও স্যোসাল মিডিয়া ব্যবহার করতাম, এখনও করি। তবে আমাকে কখনও সেটার নেশায় পায়নি। আর কোনো কিছু নেশা না পেলে সেটা আপনার ক্ষতির কারণ হবে না। এটা নির্ভর করে আপনি কীভাবে ব্যবহার করছেন। ফেসবুক ব্যবহার প্রশ্নে এমন জবাব এই শিক্ষার্থীর।
নিজের ভবিষ্যত লক্ষ্য নিয়ে এই শিক্ষর্থী বলেন, কী হবো সেভাবে তা ভাবিনি। আপাতত সাবজেক্ট পাবার পর মন দিয়ে আরো ভালো করে পড়াশুনা করতে চাই।
আগামীর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ চাইলে সিজরাত সরল উত্তর দিয়ে বলেন, বেসিক ভালো থাকতে হবে, নিয়মিত পড়তে হবে।
মেয়ের সাফল্যে আনন্দিত বাবা বাদল আহমেদ। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের ৩ মেয়ে। বড় মেয়ে সহকারী জজ হিসেবে কর্মরত। মেজো মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং নিয়ে পড়ছে। এখন ছোট মেয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সাফল্যে আমরা খুশি। তার যে বিষয় নিয়ে পড়তে ভালো লাগবে সে পড়বে। আমরা চাই সে জীবনে সফল হোক, সবাই দোয়া করবেন।
সিজরাতের উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন আব্দুর রশিদ সরকার। সদ্য অবসরে যাওয়া সাবেক এই অধ্যক্ষ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সিজরাত বরাবর ভালো শিক্ষার্থী। আমরা নিয়মিত ওদের ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়েছি। ইংরেজিসহ কয়েকটি বিষয়ে বাড়তি ক্লাসের ব্যবস্থা করেছি। কলেজের শিক্ষকরা দায়িত্ব নিয়ে ওদের পড়াশোনার যত্ন নিয়েছেন। সিজরাতসহ ওর ব্যাচের সব শিক্ষার্থীর জন্য শুভ কামনা।
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এই শিক্ষাবর্ষে সিজরাত জাহান প্রকৃতিসহ আমাদের কলেজ থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ জন শিক্ষার্থী মেডিক্যাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বি ইউনিটে কুড়িগ্রামের মতো প্রান্তিক জেলা থেকে সিজরাত প্রথম হওয়ায় আমরা আনন্দিত।