সারা দেশে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে অচলাবস্থা তৈরি হলে আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। যেহেতু সর্বজনীন পেনশনের সিদ্ধান্তটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়, সেহেতু এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন কিংবা এর পক্ষে-বিপক্ষে আপাতত কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
আজ রোববার (৩০ জুন) বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিটিউটে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০২৪ সংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সর্বজনীন পেনশনে যেতে কেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অনীহা প্রকাশ করেছেন সেট নিয়ে (শিক্ষক) নেতারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে তুলনামূলক একটি চিত্র দেখিয়েছিন। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে নানার ধরনের পর্যবেক্ষণ তাদের জানিয়েছি। সেগুলো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
“তবে সিদ্ধান্তটি (সর্বজনীন পেনশন) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়। এটি অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত এবং সরকারের সার্বিক পলিসির ডিসিশনের একটি অংশ। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং এই সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করা আপাতত সম্ভব নয়। কারণ সেটি (সর্বজনীন পেনশন) স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য সেটি প্রযোজ্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদাভাবে বিবেচনার জন্য একটি আলোচনা এসেছে সেটি আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে উপস্থাপন করতে পারি। তাছাড়া আমাদের পক্ষ থেকে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আছেন তারা ইতিমধ্যে উপস্থাপনা করেছেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়া নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কিছু বলছি না। তারা যেহেতু একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই দেশ গণতান্ত্রিক দেশ সেখানে সবারই রাজনৈতিক ও বাকস্বাধীনতার অধিকার আছে। এই অচলাবস্থা যদি আগামীকাল থেকে শুরু হয়ে থাকে তাহলে আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবস্থা নেব। আমার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই পরবর্তী সিদ্ধান্তে আমরা যাবে।
জানা গেছে, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিল না হওয়ায় সারাদেশে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। আজ রবিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পেনশন সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে।
“১৩ মার্চ ২০২৪ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচি মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং শনিবার ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। সোমবার থেকে আমরা সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাব।”
সরকার শিগগিরই এই দাবি মেনে নেবে বলে আশা করছেন শিক্ষক সমিতির এই নেতা। তিনি বলেন, না হলে ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে।
গত মার্চ মাসে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা।
শিক্ষক সমিতির দাবি, এ স্কিম ‘বৈষম্যমূলক’। এতে আগামী ১ জুলাই এবং এর পরে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।