বৈশ্বিক খাদ্য সংকট চলাকালে দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পর্যাপ্ত সার সরবরাহ নিশ্চিতে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ না নিয়ে সারের মূল্য বৃদ্ধি কারায় কৃষকের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা করেছে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ। পরিষদ সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির বলেছেন, প্রয়োজনে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময় কমিয়ে বা সাপ্তাহিক ছুটি বাড়িয়ে বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে কৃষিতে সেই ভর্তুকি দিয়ে হলেও সারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। আগস্টে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ানোর চক্কর থেকে বের না হতেই গতকাল মঙ্গলবার কৃষকের কাঁধে ফের চাপিয়ে দেয়া হয়েছে দামের বোঝা, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব মন্তব্য করেন ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের সভাপতি।
শহিদুল ইসলাম কবির আরো বলেন, ডিজেল, বিদ্যুৎ, বীজসহ সব কৃষি উপকরণের ঊর্ধ্বমুখী দরের কারণে ফসল উৎপাদনে কৃষক যখন চোখে অন্ধকার দেখছে, তখন বোরো মৌসুমে আবারও সারের দর বাড়ানোর ঘোষণায় কৃষক বিপদে পড়তে যাচ্ছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কৃষকের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। সেচ ও পরিবহন খরচ বাড়ার সঙ্গে সারের এই বাড়তি মূল্য কৃষককে জাঁতাকলে ফেলবে।
তিনি বলেন, কৃষকের খরচ বৃদ্ধির কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে কৃষককে বাড়তি প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা গুনতে হবে । যার ফলে কৃষক উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবে। দাম বৃদ্ধির ফলে অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ কমাতে আগের চেয়ে কম সার ব্যবহার করবে। এতে কৃষির ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিবৃতিতে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ সভাপতি বলেন, ডিজেল, কেরোসিন, বিদ্যুৎ ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই বেড়ে গেছে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ। ক্ষেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে সেচ দেয়া, মাড়াই করা, ফসল ঘরে তোলা, শ্রমিকের মজুরি–সব ক্ষেত্রেই বাড়তি খরচের বোঝা টানতে হচ্ছে গত আগস্ট থেকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ ও লোডশেডিং। চাষির এমন অবস্থার মধ্যেই গত অক্টোবরে সব বীজের দাম বেড়ে যায় ৩০ শতাংশ। গত জানুয়ারিতে কৃষিতে বিদ্যুৎ ইউনিটপ্রতি ৭ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৩৭ পয়সা হয়। গত আগস্টে ইউরিয়া সারের দাম ৬ টাকা বাড়িয়ে দেয় সরকার। একই মাসে ডিজেলের দাম এক লাফে বাড়ে ৩৪ টাকা।
শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, কৃষকের খরচ এভাবে দিন দিন বৃদ্ধি হতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে কৃষক আর কৃষি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। কৃষক ও কৃষি উৎপাদন দেখতে হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জাদুঘর কিংবা কৃষি উৎপাদন করা অন্যকোন দেশে যেতে হবে। কৃষক ও কৃষিকে বাঁচাতে অবিলম্বে সারের বর্ধিত মূল্য প্রত্যহার করে কৃষককে ভর্তুকি দেয়া সময়ের দাবি।