দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর বলেছেন, বর্তমান শতাব্দীতে শিক্ষাক্ষেত্রে সারা বিশ্বে একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। আমাদের সবকিছুতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন আনা দরকার। প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এসেছে। নতুন যেকোনো পরিবর্তন হলে শুরুতে সমালোচনা হলেও পরবর্তীতে কিন্তু সবাই অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। পরিবর্তিত বিশ্বে জ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দক্ষতা। একটা মানুষ জ্ঞানী হলেও দক্ষতা না থাকলে তার কোনো মূল্য নেই।
বুধবার সকালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে কলা অনুষদের তিনটি বিভাগের জন্য আউটকাম বেজড কারিকুলাম শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর আরো বলেন, প্রথাগত শিক্ষায় অনেকক্ষেত্রে নিজের মধ্যে অহমিকা বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রাত্যহিক কাজ করার ক্ষেত্রে অনীহা তৈরি হয়েছে, একা একা লেখাপড়া করার চেষ্টা হয়েছে এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বা সামষ্টিক জীবন থেকে নিজেকে দূরে থাকার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এ সবই উন্নত বিশ্বের প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা। একজন খেলোয়াড়, একজন নাট্যশিল্পী, একজন সঙ্গীতশিল্পী নিজের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বে ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করতে পারেন এবং আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হওয়ার যোগ্য। আউট কাম বেজড এডুকেশনে এই আত্মবল তৈরি করা জরুরি। আমরা এমন শিক্ষা দিতে চাই, যে শিক্ষা গ্রহণের পর গ্র্যাজুয়েটেরা প্রতিযোগিতাপ্রবণ এই বিশ্ববাজারে নিজের ক্ষেত্রে যোগ্য ভাববে।
আউটকাম বেজড শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, ব্রিটিশ উপনিবেশ যারা ভারতবর্ষের ওপর একটা শিক্ষা ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছিলো সেই পদ্ধতিতেই কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো চলছে। তারা ভাবত ভারতীয়রা তাদের মতো জ্ঞানী হতে পারবে না। তাই তারা বাঙালি তথা ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থায় ৩৩ নম্বরে পাসের প্রথা চালু করেছিল। কিন্তু তাদের নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থায় ৬৫ নম্বরে পাশের কারিকুলাম চালু করেছিলো। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিলো।
তখনও বাংলদেশ সম্পদে পরিপূর্ণ ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের এখনকার পরিবর্তনের তুলনায় জাপান তাদের শিক্ষা, শিল্প ও অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলছে একমাত্র তাদের মানসিকতা ও শিক্ষাব্যবস্থার যুগোপোযোগী পরিবর্তনের মাধ্যমে। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের কিছু আগে অস্ট্রেলিয়া তাদের শিক্ষাক্রমকে আউটকাম বেজড করে। এরপর আমেররিকাসহ উন্নত বিশ্ব আউটকাম বেজড কার্যক্রমের দিকে চলে যায়। শিক্ষা বর্তমানে আউটকাম বেজড হচ্ছে, শিক্ষার উদ্দেশ এখন দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। সারাবিশ্বে শিক্ষা কার্যক্রম দারুণ এটা বাঁক নিয়েছে। তাই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রথাগত শিক্ষাকে আউটকামবেজড এডুকেশনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আতাউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর। সম্পদ ব্যক্তি হিসেবে প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি পরিচালনা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম। এসময় কলা আইকিউএসি পরিচালক প্রফেসর ড. মো. সাহাবউদ্দিন, অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. তুষার কান্তি সাহাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।